কলেজের ক্লাস শুরু হতে ঢের বাকি তখনও। গুটি কয়েক কর্মচারী ছাড়া তখনও পর্যন্ত শুনশান কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। পিন পড়া নিস্তব্ধতা মাখা করিডোর পেরিয়ে লাইব্রেরির দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই গ্রন্থাগারিকের চোখে পড়ল বিষয়টা। দরজার পাশেই গোলাপি গিফট প্যাকেটে কে যেন উপহার রেখে গেছে। ভেতরে ব্রাউন পেপারে মোড়া সামগ্রী। সেটা যে বই, তা বাইরে থেকেই বোঝা যায়। সঙ্গে রয়েছে একটা চিঠিও। প্রাথমিকভাবে ততটাও গুরুত্ব দেননি তিনি। তবে কাগজের মোড়ক খুলতেই রীতিমতো চমকে উঠলেন তিনি। ভিতর থেকে বেরিয়ে এল চার্লস ডারউইনের বিরল দুটি নোটবুক! যেগুলো কিনা কেমব্রিজ থেকেই চুরি হয়েছিল আজ থেকে বছর কুড়ি আগে।
অবাক হওয়ার মতোই বিষয় বটে। ২০০১ সালের কথা। লাইব্রেরির সংস্কারের জন্য বইপত্র স্থানান্তরিত করা হচ্ছিল অন্যত্র। সেইসময়ই নজরে আসে ছোট্ট কাঠের বাক্স থেকে উধাও চার্লস ডারউইনের দুটি নোটবুক। রেজিস্টার পর্যবেক্ষণ করতে বোঝা যায়, দু’-একদিনের মধ্যেই চুরি গিয়েছে সেগুলো। কিন্তু সকলের নজর এড়িয়ে, সুরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে কীভাবে চুরি গেল মহামূল্যবান এই সম্পদ? না, বহু চেষ্টা করেও সে-ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু জানাতে ব্যর্থ হয় ব্রিটিশ পুলিশ প্রশাসন। শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, নোটবুকগুলির পুনরুদ্ধারের কোনো সম্ভাবনা নেই আর। চিরতরেই হারিয়ে গেছে ডারউইনের ‘ট্রি অফ স্কেচ’ এবং ‘দ্য অরিজিন অফ স্পিসিস’-এর খসড়া।
এমন দুটি বিরল নোটবুক-এর হঠাৎ প্রত্যাবর্তন আশ্চর্যজনক, তা আর নতুন করে বলে দিতে হয় না। কিন্তু দু’দশক পর কে ফিরিয়ে দিয়ে গেল এই নোটবুক দুটি? নোটবুক চুরি যাওয়ার মতো এখনও রহস্যাবৃত রয়েছে গল্পের এই অংশটাও। আসলে নোটবুকের সঙ্গে দেওয়া চিঠিটি লেখা হয়েছিল বেনামে। ফলে, প্রাথমিকভাবে এখনও পর্যন্ত প্রশাসন চিহ্নিত করতে পারেনি প্রেরককে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিশেষ তদন্ত কমিটি তৈরি করেছে ব্রিটিশ পুলিশ।
উল্লেখ্য, কেমব্রিজের আর্কাইভে থাকা দুর্মূল্য নথিদের মধ্যে অন্যতম ডারউনের এই নোটবুক দুটি। যার বর্তমান মূল্য কমপক্ষে কয়েক কোটি ডলার। ঐতিহাসিক গুরুত্বও কম নয়। বিবর্তনবাদের তত্ত্ব এবং তাকে সহজবোধ্য করে তোলার জন্য ‘ট্রি অফ লাইফ’-এর চিত্রাঙ্গন— দুটির খসড়া রয়েছে এই নোটবুক দুটিতে। এক যুগ পরে এমন দুটি বিরল সম্পদ ফিরে পেয়ে রীতিমতো খুশির জোয়ার খেলেছে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে…
Powered by Froala Editor