পৃথিবীতে মানুষের আবির আবির্ভাবের অনেক আগে থাকতো ডাইনোসররা। বিরাট আয়তনের এই সরীসৃপ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল তাদের বিশাল আকৃতির জন্যই। মহাকাশ থেকে ছুটে আসা এক বিরাট উল্কাখণ্ডের আঘাতে এক লহমায় বদলে গিয়েছিল পৃথিবীর চেহারা। ডাইনোসর ছাড়াও আরও অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল সেই ঘটনায়। আবার অনেকে সেই দুঃসময় পেরিয়েও বেঁচে ছিল। বিবর্তনের নিয়মই যে তাই। বদলে যাওয়া পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে জীবজগৎ বদলে নেয় নিজের প্রকৃতিও। এভাবেই এগিয়ে চলে সময়।
ডাইনোসরের সমসাময়িক কালে পৃথিবীতে বাস করত বেশ কিছু পাখি। তাদের আকারও ছিল ডাইনোসরের মতোই বৃহৎ। তবে পাখিদের অস্তিত্ব কিন্তু মুছে যায়নি। আর তাই আজও গাছে গাছে অসংখ্য পাখি ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু কীভাবে বেঁচে ছিল তারা? বিজ্ঞানের কাছে আজও এ এক বিস্ময়। গবেষণাও চলে বিস্তর। অনেক নতুন নতুন তথ্যও উঠে আসে সেইসব গবেষণা থেকে।
সম্প্রতি কিছু জীববিজ্ঞানী ও প্রত্নতাত্ত্বিকের মিলিত গবেষণায় উঠে এল পাখির বিবর্তন সংক্রান্ত অদ্ভুত এক তথ্য। অনেকেই খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন, পাখিদের মস্তিষ্কের আয়তনের তুলনায় তাদের শরীর বেশ ছোট। অন্য কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায় না। কিছু পাখি তো রীতিমতো পতঙ্গের আকারের। পাখিদের অভিব্যক্তির এই আশ্চর্য দিকটির কারণ সহজে বুঝতে পারতেন না অনেকেই। গবেষণায় দেখা গেল, এই অদ্ভুত অভিব্যক্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৬৬ মিলিয়ন বছর আগের এক ইতিহাস। যখন ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল পৃথিবীর বুক থেকে।
ডাইনোসরের সমসাময়িক যেসব পাখির জীবাশ্ম পাওয়া যায় তাদের আয়তন বিশাল। অথচ দ্রুত সেই চেহারা বদলাতে থাকে। কিছুদিনের মধ্যেই দেখা যায় আজকের পাখিদের মতো আকৃতি ধারণ করেছে তারা। কিন্তু এমনটা ঘটল কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে জীবাশ্মের মধ্যে থাকা করোটির সিটি স্ক্যান করলেন বিজ্ঞানীরা। জীবাশ্মে মস্তিষ্ক থেকে না। কিন্তু করোটি স্ক্যান করে মস্তিষ্কের আয়তন বুঝতে পারলেন বিজ্ঞানীরা। আর দেখা গেল, সেই আয়তন আজকের পাখিদের তুলনায় খুব বেশি বড়ো নয়। অর্থাৎ অভিব্যক্তির ফলে পাখিদের কেবল দেহের আয়তনই কমেছে। মস্তিষ্কের আয়তন যা ছিল প্রায় তাই আছে।
পাখিদের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে তেমন চর্চা হয় না বললেই চলে। অথচ এই ছোট প্রাণীর নানা আচরণ অবাক করে অনেককেই। প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে দেখে এই পাখিরা। কোনো বিপর্যয় ঘটলেও আগে থেকে টের পায় তারা। পাখিদের এই ব্যবহারের পিছনে প্রকৃত কারণ কী, সেকথা আজও রহস্যের মধ্যেই ঢাকা। তবে প্রকৃতিকে এতটা কাছ থেকে দেখে বলেই তারা বদলে নিতে পেরেছিল নিজেদের। বিবর্তনের ইতিহাস এমন ঘটনা সত্যিই আশ্চর্যজনক। আর কারেন্ট বায়োলজি পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্রে সেই আশ্চর্য তথ্যই তুলে ধরলেন বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল কেপকা ও তাঁর সহযোগীরা।