সামুদ্রিক প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় জীব অক্টোপাস। অক্টোপাসকে নিয়ে যেমন মিথের অবকাশ নেই, তেমনই শেষ নেই রহস্যেরও। জলের তলায় ছদ্মবেশ ধারণ থেকে শুরু করে পলের মতো অক্টোপাসদের ভবিষ্যদ্বাণী— সবকিছুই বেশ অবাক করেছে বিজ্ঞানীদের। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, যৌনসঙ্গমের পর নিজেই নিজেকে নির্যাতন করা শুরু করে অক্টোপাস (Octopus)। দীর্ঘ গবেষণার পর এবার এমনই একটি রহস্যের সমাধান পেলেন বিজ্ঞানীরা…
হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন নিজের ওপর নির্যাতন (Self-Torture)। ব্যাপারটা কেমন? মেটিং বা মিলনের পর থেকেই মহিলা অক্টোপাসের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চারিত্রিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। কখনও ভারী পাথরে বার বার আঘাত করতে থাকে মহিলা অক্টোপাস, কখনও আবার নিজেই ছিঁড়ে উপড়ে আনে নিজের চামড়া, খেতে থাকে নিজের ‘হাত-পা’। এই ঘটনার জেরে অনেকক্ষেত্রে মৃত্যুও হয় মহিলা অক্টোপাসের। ডিম পাড়ার আগে পর্যন্তও তাদের মধ্যে দেখা যায় এমন চারিত্রিক অস্বাভাবিকতা। কিন্তু কারণ?
১৯৭৭ সালে অক্টোপাসের মধ্যে প্রথম এই ঘটনা লক্ষ্য করেছিলেন গবেষকরা। গবেষকদের প্রাথমিক অনুমান ছিল, অক্টোপাসের দেহের কোনো বিশেষ গ্রন্থিই এই ঘটনার জন্য দায়ী। তার সঙ্গে যৌন মিলনের কোনো সম্পর্ক নেই। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল না হলেও, এবার অন্য ব্যাখ্যা উঠে এল সাম্প্রতিক গবেষণায়।
যৌন সঙ্গমের পর স্ত্রী অক্টোপাসের দেহে আকস্মিকভাবেই বৃদ্ধি পায় স্টেরয়েড হরমোনের মাত্রা। ডিম পাড়ার সময় যত এগিয়ে আসে, তত বাড়তে থাকে এই হরমোনের উৎপাদন। তা সরাসরি প্রভাব ফেলে অক্টোপাসের স্নায়ুতন্ত্রে। আর তার ফলেই এই স্ব-নির্যাতন। স্টেরয়েডস ছাড়াও আরও দু’রকমের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে মহিলা অক্টোপাসের দেহে। সেইসঙ্গে চোখের অপটিক গ্রন্থিগুলি থেকে উৎপাদিত পিত্ত অ্যাসিডও একাধিক শারীরিক ক্ষমতা কমিয়ে আনে অক্টোপাসের। এসবের বাইরেও প্রোজেস্টেরন এবং প্রেগ্নেনোলোন— এই দুটি হরমোনও দায়ী এই ঘটনার জন্যপ। দুটি হরমোনই জড়িত প্রজনন প্রক্রিয়ার সঙ্গে। ঋতুস্রাবের সময় অনেকক্ষেত্রে মহিলারা যেমন যন্ত্রণা অনুভব করেন, অক্টোপাসের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে প্রজননের আগে। এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতেই নিজেদের ওপর নির্যাতন করতে থাকে স্ত্রী অক্টোপাস।
সম্প্রতি ‘সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্রটি। গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেদ ইয়ান ওয়াং। তবে শুধু অক্টোপাসই নয়। এই ধরনের ঘটনা লক্ষ্য করা যায় গঙ্গাফড়িং-এর ক্ষেত্রেও। মিলন পরবর্তী সময়ে ঘাতক হয়ে ওঠে স্ত্রী গঙ্গাফড়িং। ধড় থেকে আলাদা করে দেয় পুরুষ সঙ্গীর মাথা!
Powered by Froala Editor