কেটেছে ৭৫ বছর, এখনও কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের স্মৃতি তাড়া করে তাঁদের

এঁদের কারোর বয়স ৮০, কারোর ৯০ ছুঁইছুঁই। পরস্পরের সঙ্গে সেরকম যোগাযোগও নেই। কিন্তু পুরনো কথা মনে করতে গেলে তাঁরা সবাই একটি জায়গাতেই ফিরে যান। একসময় এরা প্রত্যেকেই ছিলেন বন্দি; বলা ভালো যুদ্ধবন্দি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের নাৎজি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিলেন এঁরা। তারপর, শৈশব কেটেছে অউসউইৎস কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে। তাঁরা যে আজও বেঁচে আছেন, সেটা তাঁদের নিজেদের কাছেও একটা প্রবল বিস্ময়।

এই বিস্ময়ের কারণ কী, সেটা সহজেই অনুমেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান-অধিকৃত পোল্যান্ডে তৈরি হয়েছিল এই অউসউইৎস কনসেনট্রেশন ক্যাম্প। প্রায় ১৩ লাখের মতো মানুষ এখানে বন্দি ছিল। যার মধ্যে প্রায় ১১ লাখ এখান থেকে আর জীবিত ফিরতে পারেননি। যাঁরা বেঁচেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিল ইভা উমরফ, মরদেচাই চিচানোয়ার, মার্টা ওয়াইজরাও। তখন তাঁরা শিশু। ইভা এদের মধ্যে সবচেয়ে ছোটো ছিলেন; মাত্র দুই বছর বয়স। বাকিদেরও বয়স কুড়িও পেরোয়নি। কিন্তু সেই সময়ই বীভৎসতাকে সামনাসামনি দেখেছেন তাঁরা। প্রতিটা মুহূর্তে উপলব্ধি করেছেন মৃত্যুকে। চোখের সামনে দেখেছেন বাকিদের শেষ হয়ে যেতে। মাথা ন্যাড়া, নামমাত্র কাপড়-খাবার; কিন্তু অমানুষিক পরিশ্রম চলত। যার সঙ্গে সারাদিন কাজ চলছে, তার দেহই কিছুক্ষণ পর পড়ে থাকত ট্রেঞ্চে। আর মুক্তি নেই, এটাই হয়ত ভেবেছিলেন তাঁরা। ১৯৪৫-এর জানুয়ারি মাসে সেসব মিটল। সোভিয়েত রেড আর্মি অউসউইৎস কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পৌঁছলে মুক্তি পান তাঁরা।

২০২০, তাঁদের মুক্তিরই ৭৫ বছর পূর্ণ করল। আজও, জীবনের শেষ লগ্নে এসে যখন সেইসব মনে পড়ে, ভয়ে চমকে ওঠেন ইভা, মার্টারা। তাঁদের শীর্ণ হাতে এখনও জুড়ে আছে একটি ট্যাটু। তাতে একটি নির্দিষ্ট নম্বর লেখা। কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের কয়েক বছর যে নম্বরই ছিল তাঁদের একমাত্র পরিচয়। আজ আর সেই ‘নম্বর’-এ তাঁদের কেউ ডাকে না। কিন্তু সর্বক্ষণ সেই চিহ্ন বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয় তাঁদের। এরা বেঁচে আছেন আজও, কিন্তু এঁদের জীবন থেকে কিছু মূল্যবান বছর মরে গেছে চিরদিনের জন্য। তাঁরা নিজেরাও বারবার মরেছেন সেখানে। সময় চলে গেলেও, স্মৃতি যে তার ছাপ নিয়ে পড়ে থাকে…

চিত্র - সংগৃহীত