করোনা এবং লকডাউন দেশের অনেক অংশকেই থামিয়ে দিয়েছে। কাজের জায়গা তো বটেই, স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও একপ্রকার ওলোটপালোট হয়ে আছে। থেমে আছে শিল্পজগতও। তারই মধ্যে একটু একটু করে গান-বাজনা, নাটকের মধ্যে ফেরার চেষ্টা করছেন শিল্পীরা। বাঁচার রাস্তাগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন, বোঝার চেষ্টা করছেন মানুষের আওয়াজ। এসবের মধ্যে থমকে আছে দেশের একটা অংশ। বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে তাঁদের আওয়াজ আমাদের কান পর্যন্ত এসে পৌঁছচ্ছে না। কথা হচ্ছে কাশ্মীর নিয়ে। আক্ষরিক অর্থেই গভীর সমুদ্রের মধ্যে পড়েছেন কাশ্মীরের শিল্পীরা। লকডাউনের মধ্যে কর্মহীন হয়ে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। অথচ সেই কথা শোনার জন্য কেউ নেই…
এই বছরের মার্চের থেকে আরও বেশ কিছু মাস পিছিয়ে যাওয়া যাক। ২০১৯-এর ৫ আগস্ট। তারিখটা নিশ্চয়ই মনে থাকবে সবার। ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করা হয়েছিল। এটা সেই অংশ, যেখানে কাশ্মীরকে কিছু স্বাধীন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। সেই সমস্ত কিছুকে রাতারাতি খারিজ করা হয়। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত ঠিক না ভুল, সেই বিতর্ক অন্য প্রতিবেদনের বিষয়। কিন্তু বাস্তব হল, ২০১৯-এর ৫ আগস্টের পর কাশ্মীরের থিয়েটার শিল্পী, অভিনেতাদের কাছে কাজ আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে থিয়েটারের সূত্রে ভারতের নানা জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছেন তাঁরা। বশির আহমেদ লোনের মতো অভিনেতারা ‘হায়দার’, ‘বজরঙ্গি ভাইজান’, ‘কেশরী’র মতো সিনেমায় অভিনয়ও করেছেন। তিনি একা নন, এই তালিকায় আরও বেশ কিছু মানুষ আছেন। কিন্তু ৩৭০ ধারা রদের পর তাঁদের প্রত্যেকের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
এই বছর লকডাউনে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। যে সামান্যতম কাজটুকু আসছিল, তাও চলে গেল। আর আসবে কিনা তারও কোনো ঠিক নেই। বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছেন কাশ্মীরের শিল্পীরা। অনেকেই সেলাইয়ের দোকান দিয়েছেন। শিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত পরিবারের হওয়া সত্ত্বেও কেউ চাকরি দিতে রাজি নয়। রাজনৈতিক দোলাচলের জন্য একটা গোটা অংশের মানুষদের এমন অচলাবস্থার মুখে পড়তে হল। এটা তো তাঁদের অধিকারের বিরুদ্ধে। বারবার সংবাদমাধ্যম, সরকার এবং ভারতের বাকি অংশের কাছে নিজেদের অবস্থা তুলে ধরতে চেয়েছেন কাশ্মীরের এই শিল্পীরা। তাঁরা নিজেদের জায়গায় ফিরতে চান, অভিনয়ে ফিরতে চান; নিজেদের চরম দুরবস্থার কথা তুলে ধরতে চান। কিন্তু সেই সুযোগ পেলেন কই? তাই আজও কোনোরকমে দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁদের। তার মধ্যেই মঞ্চ খাটিয়ে ঝালিয়ে নেওয়া নিজেদের। তৈরি তো রাখতে হবে…
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
পত্রিকার সঙ্গে বিনামূল্যে মাস্ক, সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ কাশ্মীরি দৈনিকের