করোনার জন্য তিনমাস ধরে জাহাজবন্দি, অবশেষে পাড়ে পৌঁছলেন যাত্রীরা

বছরের শুরু। সবাই রীতিমতো আনন্দের মেজাজে। বড়ো বড়ো জাহাজ ও ক্রুজে করে লোকজন আনন্দ উদযাপন করতে বেরিয়েছেন। এটা স্বাভাবিকই, প্রতি বছর বিশ্ব জুড়ে এমন নানা আয়োজন হয়। কিন্তু এই বছর ছবিটা খানিক আলাদা হয়ে গেল কিছুদিন পর। কারণ— করোনা ভাইরাস। প্রথমে চিন, পরে গোটা বিশ্বে নিজের মারণ থাবা বসাল এই আণুবীক্ষণিক জীব। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পুরোপুরি ব্যহত। ঘরবন্দি হয়ে পড়ল সবাই। কিন্তু যে ক্রুজ জাহাজগুলো বছর শুরুতে বেরিয়েছিল? তারা অনেকেই কয়েকদিন পর ফিরে এলেও, কয়েকটি জাহাজ আটকে পড়ল সমুদ্রেই। তেমনই একটি ক্রুজ জাহাজ ‘কোস্টা ডেল জিয়োসা’। দীর্ঘদিন সামুদ্রিক কোয়ারান্টাইনে থাকার পর, সম্প্রতি নিজের জায়গায় ফিরল সে।

কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, জানুয়ারির ৫ তারিখে এই বিশাল ক্রুজটি ইতালির ভেনিস থেকে যাত্রা শুরু করে। জাহাজে ছিলেন ১,৫১৯ জন যাত্রী এবং ৮৯৮ জন জাহাজ-কর্মী। সবাই মিলেই বেরিয়ে পড়া মাঝসমুদ্রে। সবাই মজা করবে, আনন্দ করবে; যেমন প্রতি বছর হয়ে থাকে। ঠিক ছিল, সমুদ্রে কাটিয়ে এপ্রিলের ২৬ তারিখে সবাইকে নিয়ে ফেরত আসবে। কিন্তু, সেই মজাই পরে হয়ে যায় বিড়ম্বনা।

সবকিছু দিব্যি চলছিল। এমন সময় মার্চে সমুদ্রে থাকা প্রতিটা ক্রুজে করোনা সংক্রমণের খবর পৌঁছে যায়। তারপর থেকে সমুদ্রে থাকাই হয়ে যায় নিজেদের রক্ষা করার অন্যতম পন্থা। কিন্তু সবাইকে তো বাড়ি ফিরতে হবে! আরও সাংঘাতিক হবার আগে যাতে সেটা সম্পন্ন হয়, সেটাই হওয়া উচিত প্রাথমিক উদ্দেশ্য। অন্যান্য ক্রুজের মতো কোস্টা ডেল জিয়োসাও ইতালির দিকে রওনা হতে থাকে। ইতিমধ্যেই কিছু যাত্রী অস্ট্রেলিয়ার পারথে নেমে যান। বাকিদের নিয়ে ক্রুজ এগোতে থাকে গন্তব্যের দিকে।

একশো’রও বেশি দিন জাহাজে কাটানোর পর অবশেষে কোস্টা ডেল জিয়োসা ইউরোপে প্রবেশ করে। ইতিমধ্যে ইউরোপের পরিস্থিতি কোন অবস্থায় পৌঁছে গেছে, তা আর বলার দরকার নেই। সেই অবস্থাতেই ২০ এপ্রিল ক্রুজটি বার্সেলোনায় পৌঁছয়। প্রায় ৩০০ জন যাত্রী সেখানে অবতীর্ণ হন। বাকিদের নিয়ে পরে ইতালিতে পৌঁছয় এটি। একটি খবর অনুযায়ী, সমুদ্রে থাকাকালীন ওই ক্রুজে একজন যাত্রী মারা যান। তাঁর করোনা হয়েছিল কিনা, সে সম্পর্কে খোঁজখবর চলছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা সবাইকেই করতে হবে। এখন এমন পরিস্থিতিতে বাড়ি পৌঁছবেন কীভাবে, সেটাই সমস্যা। আপাতত খবর অনুযায়ী, কোস্টা ডেল জিয়োসাই শেষ ক্রুজ যেটা সমুদ্রে ছিল। তাও সাবধানের মার নেই। প্রশাসন ও জাহাজ কর্তৃপক্ষের তরফে আরও খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।