প্রতিনিয়তই পৃথিবীর বুক থেকে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক প্রজাতি। মানুষের আধিপত্যই যেন ক্রমশ সংকটে ঠেলে দিচ্ছে তাদের। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল আরও এক রাজকীয় প্রাণীর নাম। হ্যাঁ, এবার বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় স্থান পেল আফ্রিকান হাতি। সাম্প্রতিক গবেষণার ভিত্তিতে রেডলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই প্রজাতিকে।
তবে আফ্রিকান হাতি বললে ভুল থেকে যায় খানিকটা। অধিকাংশ মানুষের কাছেই অজ্ঞাত, আফ্রিকান হাতির মধ্যে রয়েছে দুটি প্রজাতি— সাভানা এলিফ্যান্ট এবং ফরেস্ট এলিফ্যান্ট। সাভানা হাতির দেখা মেলে উপ-সাহারান আফ্রিকার সমভূমিতে। অন্যদিকে ফরেস্ট এলিফ্যান্টের বসবাস মূলত মধ্য এবং পশ্চিম আফ্রিকায়। সাভানা হাতির থেকে এই প্রজাতির আয়তন খানিকটা ছোটো। তাদের গায়ের রং-ও খানিক গাঢ়।
দুটি প্রজাতিকেই বিপন্ন হিসাবে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচারের সরকারি মূল্যায়নের মাধ্যমেই তাদের নথিভুক্ত করা হয়েছে রেড লিস্টে।
বাস্তুতন্ত্র রক্ষার ক্ষেত্রে আফ্রিকায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় এই রাজকীয় প্রাণীরা। তাদের মুছে গেলে বিপজ্জনক মোড় নেবে আফ্রিকার পরিবেশের ভারসসাম্য। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কাজেই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে তাদের সংরক্ষণ।
আরও পড়ুন
শিল্পকে হাতিয়ার করেই সভ্যতার সঙ্গে লড়াই ব্রাজিলের বিলুপ্তপ্রায় জনগোষ্ঠীর
আফ্রিকান হাতিদের ধারাবাহিকভাবে জনসংখ্যা কমার অন্যতম কারণ হিসাবে উঠে আসছে শিকার। দাঁতের জন্য নির্বিচারে চোরাশিকার চলছে আফ্রিকায়। ২০১১ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক হাতি শিকার করা হয়েছিল পূর্ব আফ্রিকায়। ব্যবস্থা যে নেওয়া হয়নি তেমনটা নয়। চোরাশিকার অনেকটা কমলেও স্থিতাবস্থায় আসেনি পরিস্থিতি। শিকারের ঘটনা হ্রাস পেলেও তা সামান্য। পাশাপাশি হাতির প্রজননে দীর্ঘ সময় লাগার কারণে ক্ষতিপূরণ হয়ে উঠছে না কিছুতেই। যদি এমনটাই চলতে থাকে, আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই সুমাত্রার গণ্ডারদের মতো মুছে যাবে আফ্রিকার হাতিদের অস্তিত্বও।
২০১৬ সালের গণনা অনুযায়ী আফ্রিকায় বর্তমানে উভয় প্রজাতি মিলিয়ে হাতির সংখ্যা ৪ লক্ষ ১৫ হাজারের কাছাকাছি। আফ্রিকার মতো একটি গোটা মহাদেশের নিরিখে দেখতে গেলে এই সংখ্যা সামান্যই। বর্তমানে তা আরও বেশ খানিকটা কমেছে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। আফ্রিকার প্রতিটি দেশের প্রশাসনকেই যে এই বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে, সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এখন দেখার কতটা তৎপর আর সচেতনভাবে সেই দায়িত্ব পালন করতে পারে মানব সভ্যতা…
আরও পড়ুন
ইংল্যান্ডের নিঃসঙ্গতম হাতির মুক্তির দাবি, ৪ লক্ষ মানুষের পিটিশন
Powered by Froala Editor