শুষ্ক আলোচনা নয়, পরিবেশ বাঁচাতে সরাসরি উদ্যোগ চান আফ্রিকার পরিবেশকর্মীরা

আজ থেকে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে শুরু হতে চলেছে কপ-২৬ সম্মেলন। পরিবেশ সুরক্ষার পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হতে চলেছে অন্তত ২০০টি দেশের রাষ্ট্রনায়করা। কিন্তু এই সম্মেলনকে ঘিরে কতটা আশাবাদী পরিবেশকর্মীরা? সাম্প্রতিক নানা ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, উন্নত দেশগুলি নয়, বরং পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে বড়ো শিকার আফ্রিকার দেশগুলি (African Countries)। সম্ভবত আফ্রিকার একটি দেশও আর নিরাপদ নেই। আর এই অবস্থায় কেনিয়ার পরিবেশকর্মী শার্লট আমান বলছেন, ২৬ বছর ধরে তো শুধু আলোচনাই চলছে। এবার তার চেয়ে বেশি কিছু করা প্রয়োজন।

শার্লটের বয়স ২৩ বছর। তাঁর জন্মের আগে থেকেই গ্লাসগো শহরে প্রায় প্রতি বছর নিয়ম করে সম্মেলন বসে রাষ্ট্রনায়কদের। কিন্তু পরিবেশের অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকেই এগোচ্ছে। এখন কেনিয়ার প্রতিটা অঞ্চল হয় খরার কবলে, নয়তো বন্যায় ভেসে যাচ্ছে। কৃষিকাজের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন সকলে। আর তার ফলে দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে শিক্ষাব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলিতে দীর্ঘদিন স্কুলে যেতে পারছে না শিশুরা।

অন্যদিকে সমুদ্রতীরের ছোট্টদেশ সেনেগালে ক্রমশ পাড় ভাঙছে। স্থলভাগকে গ্রাস করছে সমুদ্র। মানুষ বারবার ভিটেমাটি ছেড়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন। আবার কিছুদিনের মধ্যেই সেই নতুন আশ্রয়ও গ্রাস করছে সমুদ্র। বদলাচ্ছে নাইজেরিয়ার জলবায়ুও। নাইজেরিয়ায় সাধারণত দুটি ঋতুই স্পষ্ট বোঝা যেত। একটি গ্রীষ্মকাল, অন্যটি বর্ষাকাল। কিন্তু সেই চেনা ঋতুচক্র ক্রমশ ব্যাঘাত পাচ্ছে। এখন বর্ষাকাল বলে আর প্রায় কিছুই নেই। বছরের যে কোনো সময় হঠাৎ বৃষ্টি দেখা যায়।


আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনে বিচলিত তরুণ প্রজন্ম, বাড়ছে উদ্বেগ, জানাল গবেষণা

উগান্ডার উষ্ণতাও বাড়ছে ক্রমশ। কৃষিকাজই সে-দেশের মানুষের প্রধান জীবিকা। অথচ এখন ফসল ফলানোই রীতিমতো কঠিন হয়ে পড়ছে। যদি বা ফসল ফলছে, তাকেও বাঁচিয়ে রাখা যাচ্ছে না। রোদে পুড়ে যাচ্ছে। কৃষিকাজের জন্য জলটুকুও পাওয়া যাচ্ছে না। আবার তারই মধ্যে কখনও বন্যা এসে ভাসিয়ে দিয়ে যাচ্ছে সব।

আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনের আভাস দিয়ে নোবেল 'ভবিষ্যৎদ্রষ্টা' বিজ্ঞানীদের

এই পরিস্থিতিতে পৃথিবীর সমস্ত রাষ্ট্রনায়কদের কাছে আফ্রিকার পরিবেশকর্মীরা দাবি জানাচ্ছেন, আর শুধু আলোচনা নয়। এবার সম্পূর্ণভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করা হোক। সেইসঙ্গে এমন একটা পরিবেশনীতি নেওয়া হোক, যা সার্বিকভাবে পৃথিবীর সমস্যার সমাধান করতে পারে। পরিবেশ সমস্যা কয়েকটা নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়। যে পরিকাঠামো বজায় রাখতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, তা কেবল উন্নত দেশগুলিতেই সম্ভব। সেখানে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা দেশগুলো বরাবর মার খাবে। বরং সমস্ত দেশের কথা মাথায় রেখেই পরিকল্পনা নেওয়ার সময় এসেছে আবার। নাহলে মানুষের অস্তিত্ব হারিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনে চেহারা পাল্টাচ্ছে পাখিদেরও!

Powered by Froala Editor

Latest News See More