সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমন সারা পৃথিবীকে স্তব্ধ করে রেখেছে। তবে এমন বড় মাত্রায় না হলেও, ভাইরাসের আক্রমণ কিন্তু নতুন কোনো ঘটনা নয়। এমনই কিছু ভাইরাস কিছুদিন আগে পর্যন্তও সারা পৃথিবী শাসন করত। যেমন, পোলিও ভাইরাস। জলের মাধ্যমে এক মানুষের শরীর থেকে আরেক মানুষের শরীরে সংক্রমিত হত ভাইরাস। আফ্রিকা থেকে প্রায় সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছিল পোলিও ভাইরাস। আমাদের দেশও তার ব্যতক্রম নয়। তবে সম্প্রতি সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশকেই পোলিওমুক্ত বলে ঘোষণা করেছে আফ্রিকান রিজিওনাল সার্টিফিকেশন বডি।
পোলিও ভাইরাসের আক্রমণের লক্ষ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা। সরাসরি তাঁদের স্নায়ুতন্ত্রে আক্রমণ করে পোলিও ভাইরাস। আর তার পরেই স্থায়ী প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয় শিশুরা। শ্বাসযন্ত্র অসাড় হয়ে মৃত্যুও হত অনেকের। আর বাকিদের সারাজীবন বিকলাঙ্গতা নিয়ে বেঁচে থাকতে হত। মাত্র ২৫ বছর পিছিয়ে গেলেও আফ্রিকা মহাদেশে হাজার হাজার পোলিও আক্রান্ত শিশুর সন্ধান পাওয়া যেত। কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর দিন এবার শেষ হল। করোনা পরিস্থিতিতে আনন্দ খানিকটা ম্লান হলেও, একেবারে অন্ধকার নয়।
১৯৫২ সালে ডা. জোনাস স্যাক প্রথম পোলিও ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন। এর ঠিক ৯ বছর পর আসে ওরাল পোলিও ভাইরাস। পোলিও রোগের আর কোনো চিকিৎসা না থাকলেও একমাত্র প্রতিষেধকের জোরেই শুরু হল এক যুদ্ধ। পৃথিবীর সমস্ত দেশেই পোলিও প্রতিষেধক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অন্যান্য দেশে অনেক আগেই পোলিও সংক্রমণ কমে এলেও আফ্রিকার দেশগুলিতে কিন্ত দীর্ঘদিন শাসন করেছে পোলিও ভাইরাস। তবে একুশ শতকের শুরু থেকেই একে একে সমস্ত দেশ নিজেদের পোলিওমুক্ত বলে ঘোষণা করে। শেষ পর্যন্ত কেবল নাইজেরিয়ার বাকি ছিল। তবে সম্প্রতি নাইজেরিয়াকেও পোলিওমুক্ত বলে ঘোষণা করল এআরএসবি। যদিও এবছর সারা আফ্রিকা মহাদেশে ১৭৭ জনের শরীরে পোলিও সংক্রমণ ঘটেছে, তবে চিকিৎসকদের মতে সেটা প্রতিষেধকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে জন্মানো। এর জন্য পৃথক ব্যবস্থা নিতে হবে।
যে ভাইরাস মানুষকে রীতিমতো আতঙ্কিত করে রেখেছিল, পৃথিবী থেকে তার বিদায় নিতে আর বেশি বাকি নেই। কেবল পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে এখনও আতঙ্ক ছড়ায় পোলিও। সেই আতঙ্ক থেকেও হয়তো মুক্তি মিলবে আর কিছু বছরের মধ্যেই। এই সাফল্য বর্তমান পরিস্থিতিতেও আশার সঞ্চার করে বৈকি।
আরও পড়ুন
ভ্যাকসিন-বিরোধী প্রচার নিয়ে বিতর্ক পশ্চিমি দুনিয়ায়; গোটা পৃথিবীতেই পিছিয়ে পড়ছে বিজ্ঞান?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
পোলিও নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় বাঙালি বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা