শীত পড়তেই চরম খাদ্য সংকটে আফগানিস্তান, বাড়ছে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা

যে দেশের বুকে লুকিয়ে রয়েছে প্রায় ৪০০ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রাকৃতিক সম্পদ, সেই দেশই ভুগছে চরম অনাহারে (Food Crisis)। এ যেন ঠিক ‘হীরক রাজার দেশে’-র গল্প। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে আফগানিস্তান (Afghanistan) নিয়েই। তালিবান ক্ষমতায় আসার পরেই চরম আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে দেশের অধিকাংশ মানুষ। এবার ঋতুর পরিবর্তন যেন সাক্ষাৎ শমন হয়ে দাঁড়াল তাঁদের কাছে। শীতকাল পড়তে না পড়তেই টান পড়তে শুরু করেছে খাদ্য সরবরাহে। আগামী ছ’মাসে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে বলেই এবার সতর্ক করল জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (World Food Program)।

রুক্ষ মরুভূমির দেশ হওয়ায় আফগানিস্তানে গ্রীষ্ম যেমন প্রখর, তেমনই হাড়কাঁপানো শীত পড়ে শরৎ কাটলেই। বৃষ্টির পরিমাণ একেবারে নিচে নেমে আসায় শুষ্ক হয়ে ওঠে আফগানিস্তানের আবহাওয়া। এবারেও শীতের আগমনে সেই দিকেই এগোচ্ছে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি। ক্রমশ খরার শিকার হচ্ছে একের পর এক অঞ্চল। যার ফলে, খাদ্য উৎপাদনই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে আফগান কৃষকদের কাছে। টান পড়ছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির খাদ্যভাণ্ডারে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির রিপোর্ট জানাচ্ছে, গোটা দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ নাগরিকদের কাছেই বর্তমানে পর্যাপ্ত খাবার নেই। অনাহারের শিকার ২.৩ কোটির বেশি মানুষ। এতদিন পর্যন্ত চরম অর্থাভাবে খাবার জুটছিল না অধিকাংশ আফগান নাগরিকের। রাষ্ট্রপুঞ্জের দেওয়া রেশনই ছিল একমাত্র ভরসার পথ। এবার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কণ্টকাকীর্ণ সেই পথও। এই বিপর্যয় চরমে পৌঁছাবে ক্রমশ তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে।

তবে আসরাফ গানি সরকারের পতন না হলে হয়তো এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হত না আফগানিস্তানকে। এমনটাই মনে করছেন কূটনীতিবিদদের একাংশ। বৈদেশিক বিনিয়োগে গোটা আফগানিস্তান-জুড়ে শুরু হয়েছিল একাধিক সেচ প্রকল্পের কাজ ও বাঁধ নির্মাণ। তালিবান ক্ষমতায় আসার পর সেই সকল বিনিয়োগই বন্ধ করে দিয়েছে ইউরোপিয় ব্যাঙ্ক এবং পশ্চিমা শক্তিগুলি। যার কারণে, আরও চরমে পৌঁছেছে খরার প্রকোপ। 

আরও পড়ুন
দেশছাড়া আফগানিস্তানের শেষ ইহুদি, আশ্রয় পাচ্ছেন ইজরায়েলে

অন্যদইএক এত কিছুর পরেও সেইভাবে কোনো হেলদোল নেই তালিবান সরকারের। যাঁরা পর্যাপ্ত রেশন পাচ্ছেন না, বন্দুকের নল দিয়ে তাঁদেরও কণ্ঠরোধ করে রেখেছে তালিবান। দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়লেই বা কতটা টনক নড়বে তালিবানের, যথেষ্ট সন্দেহ আছে তা নিয়ে। আফগানিস্তানের এই মানবিক সংকটের মুখে শেষ পর্যন্ত কি নমনীয় হবে পশ্চিমা শক্তিগুলি? থেকে যাচ্ছে সেই প্রশ্ন। তবে শুধু অর্থ বিনিয়োগই নয়, বিদেশ থেকে সরাসরি খাদ্যের যোগান না হলে বিশেষজ্ঞদের এই ভবিষ্যদ্বাণী ভুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে…

আরও পড়ুন
আফগানিস্তানের এলজিবিটি সম্প্রদায়ের জন্য লড়ছেন নেমাত সাদাত, সাক্ষী কলকাতাও

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মুণ্ডহীন ছাগল নিয়ে ‘পোলো’, আফগানিস্তানের জাতীয় খেলাতেও নৃশংসতার ছাপ