পুরুষের যুদ্ধের ফল ভোগ করতে হয় মহিলাদেরই। তবে শুধুই যুদ্ধের নয়, পুরুষে পুরুষে শান্তি প্রতিষ্ঠারও শিকার মহিলারাই। আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমে এমনই প্রতিক্রিয়া রেখেছেন লিঙ্গসাম্য আন্দোলনের নেত্রী লিনা সিরজাদ। আফগানিস্তান থেকে সেনা অপসারণের প্রতিশ্রুতি নিয়েই মার্কিন নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন জো বাইডেন। ক্ষমতায় এসেই সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজও শুরু করে দিয়েছেন তিনি। কয়েকদিন আগেই প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানিয়েছেন, আর একমাসের মধ্যেই সেনা অপসারণের প্রক্রিয়া সশুরু হয়ে যাবে। তবে বাইডেনের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উঠে আসছে আফগান মহিলাদের নিরাপত্তার প্রশ্নও। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা রাজনৈতিক জটিলতার অবসান হয়তো ঘটাবে। কিন্তু মহিলাদের স্বাধীনতার ক্ষেত্রটি আবারও সংকুচিত হয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
৯০-এর দশকের শেষভাগে আফগানিস্তান জুড়ে তালিবানি শক্তির প্রভাব বাড়তে থাকে। একুশ শতকের শুরুতেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে মহিলারা একরকম বাড়ি থেকেই বেরোতে পারতেন না। বাড়ির বাইরে পা দিলে মুখ ঢেকে রাখা ছিল বাধ্যতামূলক। তালিবানিরা প্রকাশ্যে প্রচার করেছেন, রাস্তায় কোনো মহিলার মুখ দেখা গেলে তাঁর শিরোচ্ছেদ করা হবে। নারীশিক্ষার উদ্দেশ্যে তৈরি হওয়া একের পর এক স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ঠিক এই সময়েই মার্কিন সেনাবাহিনী আফগানিস্তানের মাটি স্পর্শ করে। তালিবান শক্তির সঙ্গে মার্কিন বাহিনীর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সঙ্গেই চলতে থাকে নারী প্রগতি বিষয়ক কর্মসূচি। তালিবানরা তাদের অস্ত্র নিয়ে এগিয়ে এলে মার্কিন বাহিনী ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন সেনা অপসারণ করলে সেই পরিসর আবার নষ্ট হবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
ইতিমধ্যে মার্কিন সেনাবিভাগের পক্ষ থেকেও বাইডেন সরকারকে একটি স্বারকলিপি দেওয়া হয়েছে। তাতে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আফগানিস্তানে সেনা মোতায়েনের অন্যতম বড়ো কারণ ছিল নারীস্বাধীনতার বিকাশ। মৌলবাদী শক্তির হাত থেকে আফগান মহিলাদের রক্ষা করতে মার্কিন সেনা মোতায়েন রাখা বিশেষ প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা। অবশ্য এই আশঙ্কার বিপরীতে একধরণের আশাবাদী দৃষ্টি রাখার কথা বলছে হোয়াইট হাউস। প্রেসিডেন্টের ঘোষণা অনুযায়ী, আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসাবে তার সামাজিক দায়িত্ব পালন করবে এর পরেও। তবে মার্কিন সেনাবাহিনীর ছায়ায় নিজেদের সুরক্ষিত না রেখে এবার আফগান মহিলাদের নিজেদের দায়িত্ব নিতে হবে নিজেদেরই। সেই প্রক্রিয়া অবশ্যই খুব সহজ নয়। কিন্তু সামরিক প্রভাব বিস্তার করে কিছুদিন সমস্যাকে ঠেকিয়ে রাখা যায়। প্রকৃত সামাজিক প্রগতি গড়ে তুলতে গেলে সমাজকে ভিতর থেকে গড়ে তুলতে হয়। আফগান মহিলাদেরকেই এবার সেই দায়িত্ব নিতে হবে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আফগানিস্তানে দু-দশকব্যাপী মার্কিন সেনা আধিপত্যের ইতি?