কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন ইতিমধ্যে। কেউ পরিচয় গোপন করে লুকিয়ে রয়েছেন আফগানিস্তানের বুকেই। প্রত্যেকেরই আশঙ্কা, তালিবানরা তাঁদের সন্ধান পেলে প্রাণে মেরে ফেলবে। তাঁদের ‘অপরাধ’ একটাই, বিশ্বের দরবারে তাঁরা পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন আফগানিস্তানের নাম। আজ প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে সে-দেশের জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সদস্যদের। ইতিমধ্যে গোপনে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখে চলেছেন তাঁরা। সামাজিক মাধ্যমে তৈরি করেছেন তাঁদের গ্রুপ। সেখানে প্রতি রাতে আলোচনা চলে। যাঁরা আফগানিস্তান ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁরা বাকিদেরও দেশ ছেড়ে পালানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু নিজের দেশ ছেড়ে চলে যেতেও মন চাইছে না অনেকের। এমন অদ্ভুত পরিস্থিতির মুখে আজ দাঁড়িয়ে রয়েছেন ২৫ জন মহিলা খেলোয়াড়।
আফগানিস্তানে ক্রিকেটের ইতিহাস খুব বেশিদিনের নয়। ৮০-র দশকের শেষদিক থেকে ক্রিকেট খেলার সঙ্গে পরিচয় হয় আফগানদের। ৯০-এর দশকে একাধিকবার জাতীয় দল তৈরির পরিকল্পনা হলেও সেই সময়ের রাজনৈতিক চাপান-উতোরের কারণে আইসিসি থেকে অনুমোদন পাওয়া যায়নি। ২০০১ সাল নাগাদ তৎকালীন তালিবান সরকার জানায় পুরুষদের ক্রিকেট খেলার বিষয়ে তাদের আপত্তি নেই। আইসিসি থেকেও অনুমোদন পাওয়া গেল সহজেই। আর সেই বছরের শেষেই তালিবান সরকারেরও পতন হল। ফলে দেখতে দেখতে বাড়ল ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা। কিন্তু পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের এগিয়ে আসার পথটা সহজ ছিল না। তালিবানরা সরকারে না থাকলেও দেশে মৌলবাদী মানুষের সংখ্যা কম নয়। তাঁদের বিরোধিতাকে প্রতিরোধ করে এগিয়ে আসাটা সহজ নয়। তবে সেই কঠিন লড়াইয়েও পিছিয়ে যাননি মহিলারা। ২০০৭ সালে তৈরি হয় প্রথম মহিলা দল।
মহিলা ক্রিকেট দল তৈরি হলেও দেশের বাইরে খেলার অনুমতি সহজে পাওয়া যায় না। নানা রাজনৈতিক দর কষাকষির পর ২০১২ সালে প্রথমবারের জন্য তাজাকিস্তানের মাটিতে ক্রিকেট খেলতে যায় আফগান মহিলাদের বাহিনী। মধ্যপ্রাচ্যের অন্য ৫টি দেশকে হারিয়ে সেবারের টুর্নামেন্টে জয়ী হন তাঁরা। কিন্তু এর ২ বছরের মাথায় আবারও দল ভেঙে দিতে হয়। একের পর এক হুমকি আসতে থাকে মহিলা ক্রিকেটারদের কাছে। সেইসব বাধা জয় করেও অনুশীলন চালিয়ে গিয়েছেন। ২০১৭ সালে আইসিসি থেকেও স্বীকৃতি পায় আফগানিস্তানের জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দল। ইতিমধ্যে পুরুষদের দলে রাশিদ খান বা মহম্মদ নবির মতো খেলোয়াড় সারা বিশ্বের মন জয় করে নিয়েছে। মহিলাদের দলেও ২৫ জন বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু আগস্ট মাসে তালিবানরা কাবুল শহর দখল করে নিলে সেই স্বপ্ন যেন চিরকালের মতোই স্বপ্নে পরিণত হল। আবার কোনোদিন খেলার মাঠে ফিরতে পারবেন কিনা জানেন না কেউই। তবু লড়াই চলবে, এটুকুই বলছেন তাঁরা।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
খোঁজ নেই প্রথম মহিলা আফগান গ্রাফিটি শিল্পীর; প্রতিবাদের মাশুল?