নিরাপত্তারক্ষীদের দাবি, গ্রামবাসীরা প্রত্যেকেই উগ্রপন্থী মাওবাদী। তাঁরা দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে চান। অথচ একমাসেরও বেশি সময় ধরে তাঁরা বসে আছেন অহিংস প্রতিবাদের মঞ্চে। উল্টোদিক থেকে, অর্থাৎ পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীদের দিক থেকে ধেয়ে এসেছে নিষ্ঠুর আক্রমণ। গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৭ জন প্রতিবাদী। কিন্তু কোনোকিছুতেই পিছু হটতে রাজি নন তাঁরা। এর মধ্যেই বাস্তার শহর থেকে কিছু দূরে এক আশ্চর্য উৎসবের আয়োজন করেছিলেন তাঁরা। প্রতিবাদের উৎসব। ১৭ জন শহিদের স্মৃতিতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে উঠে এল প্রতিবাদের এক ব্যতিক্রমী ভাষ্য।
মধ্যপ্রদেশের বিজাপুর জেলার আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম সিলগার। এমনিতে নিরীহ শান্ত গ্রাম। গ্রামের মানুষ নিজেদের মধ্যে মিলেমিশে থাকেন। কিন্তু সমস্যার সূত্রপাত হয় ২০০৬ সালে। পুলিশের গোপন রিপোর্টে দাবি করা হয় গ্রামে নাকি ডেরা বেঁধেছেন নকশালপন্থীরা। শুরু হল এনকাউন্টার। সিলগার গ্রামের ১০টি বাড়ি নির্বিচারে পুড়িয়ে দেয় নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী। শুধু সিলগার নয়, আশেপাশের ৫টি গ্রামের মোট ১২৭টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান ১০ জন। শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন গ্রামবাসীরা। কিন্তু তাতে অত্যাচারের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে প্রায় সকলেই গ্রাম ছাড়লেন। গোটা অঞ্চল জনশূন্য হয়ে পড়ল।
এতদিন দেশের নানা প্রান্তে পরিযায়ী শ্রমিক হয়েই কাজ করতেন গ্রামবাসীরা। কোনোদিন আবার গ্রামে ফিরতে হবে, এমনটা ভাবেননি। কিন্তু করোনা অতিমারীর কারণে ফিরে আসতে হল অনেককেই। ফিরলেন ঠিকই, কিন্তু গ্রাম তো আর আগের মতো নেই। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ছুটে চলেছে ৬ লেনের প্রশস্ত রাস্তা। ৫ কিলোমিটার দূরে দূরে বসেছে নিরাপত্তারক্ষীদের ক্যাম্প। আর গ্রামগুলি রাস্তার থেকে এতটাই নিচু যে বৃষ্টি হলেই সব ভেসে যাবে। এরপর বারবার স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দরবার করেছেন তাঁরা। কিন্তু কেউই তাঁদের কথা কানে তোলেননি। অবশেষে ১২ মে সমস্ত গ্রামবাসী একসঙ্গে প্রতিবাদ জানাতে গেলে তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় পুলিশ। পুলিশ এবং নিরাপত্তারক্ষীদের দাবি, গ্রামবাসীরাই আগে আক্রমণ করেছিলেন। তাঁদের ছোঁড়া পাথরে বেশ কিছু গাড়ির কাচ ভেঙেছে। তবে পুলিশের গুলি ততটা নিরীহ নয়। ১৭ জন মানুষের জীবন কেড়ে নিল সেদিনের সেই ঘটনা।
এরপর থেকেই শুরু হল শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিক্ষোভ। আন্দোলনকারীরা গড়ে তুলেছেন মূলবাসী বাঁচাও মঞ্চ। ৬০ জন তরুণের নেতৃত্বে চলছে বিক্ষোভ। প্রত্যেকেরই বয়স ১৭-২১। অভিজ্ঞতা কম। কিন্তু জেদ অনেক। জঙ্গলের উপর তাঁদের অধিকার ষোলো-আনা সাংবিধানিক। এভাবে জোর করে বাসস্থান লুঠ করে নিয়ে যেতে দেবেন না তাঁরা। আর সঙ্গে রয়েছেন ৫টি গ্রামের সমস্ত মানুষ। তাঁরা এই অবস্থানমঞ্চের নাম দিয়েছেন বাস্তারের শাহীনবাগ। শাহীনবাগ আজ আর শুধু দিল্লির বুকে সীমাবদ্ধ নেই। দেশের শিরায় শিরায় ছড়িয়ে পড়ছে আন্দোলনের স্রোত। শেষ পর্যন্ত কি সফল হবে মানুষের গণতন্ত্রের অধিকার?
আরও পড়ুন
প্রতিবাদী সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করতে বিমান ‘হাইজ্যাক’ বেলারুশের!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ নয়; হাতে বন্দুক তুলে নিলেন মায়ানমারের ‘বিউটি কুইন’