সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের বিপন্নতার পিছনে দায়ী অম্লতাও!

ঝিনুক, শামুক-সহ একাধিক জলজ প্রাণীর দেহের বাইরে দেখা যায় ক্যালশিয়াম কার্বোনেটের শক্ত আস্তরণ। কথ্যভাষায় আমরা যাকে খোলস বলে থাকি। জন্মের জন্মের ঠিক কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই প্রতিরক্ষামূলক খোলস নির্মাণের কাজ শুরু করে দেয় সামুদ্রিক ঝিনুক বা ওয়েস্টার। তবে ক্রমশ সমুদ্রের অম্লতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই ক্ষমতা হারাচ্ছে তারা। তাছাড়াও বিপন্ন হতে বসেছে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের একটি বড়ো অংশ। সম্প্রতি এমনটাই উঠে এল গবেষণায়।

কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিক্যাল ওসিয়ানোলজির অধ্যাপক ও গবেষক ক্যাথেরিন রিচার্ডসনের নেতৃত্বে চলেছিল এই বিশেষ গবেষণা। অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নির্গমনের কারণে কী কী প্রভাব পড়ছে সমুদ্রে— তা নির্ণয় করাই ছিল এই অধ্যয়নের মূল লক্ষ্য। আর সেই বিশ্লেষণেই উঠে আসে রীতিমতো চাঞ্চল্যকর তথ্য। 

পৃথিবীর মোট কার্বন নির্গমনের ৩০ শতাংশ শোষণ করে সমুদ্র। সামুদ্রিক পরিবেশে শোষিত এই কার্বনের ব্যবহারেই ক্যালশিয়াম কার্বোনেটের খোলস তৈরি করে ঝিনুক, শামুক ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী। কোরালের বৃদ্ধি এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর হাড়ের গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সামুদ্রিক কার্বন। ফলে প্রাথমিকভাবে মনে হওয়া স্বাভাবিক, সমুদ্রে কার্বনের মাত্রা বৃদ্ধি না চাইতেই বৃষ্টিপাত হয়ে দাঁড়িয়েছে সামুদ্রিক প্রাণীদের কাছে। তবে বাস্তবে ঘটে চলেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন ক্ষমতা। 

সাধারণত, সমুদ্রিক প্রাণীরা নদীর মিষ্টি জলে জীবনধারণ করতে পারে না। তার একটা কারণ যেমন লবণের মাত্রা ও জলস্তরের চাপের তারতম্য, তেমনই জলের অম্লতার পরিমাণও অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় তাদের কাছে। অম্লতা নির্দিষ্ট মাত্রা বেশি বা কম হলে, জলজ প্রাণীদের জৈবিক প্রক্রিয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। সমুদ্রে কার্বনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘটছে সেই ঘটনাই। সমুদ্রের জলের রাসায়নিক বিশ্লেষণ জানাচ্ছে, কার্বনের আধিক্যের কারণে সমুদ্রের জলস্তরের চাপে কার্বন ডাই অক্সাইড ও জলের বিক্রিয়ায় তৈরি হচ্ছে কার্বোনিক অ্যাসিড। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই ঘটনাকে বলা হয় ওসিয়ানিক অ্যাসিডিফিকেশন বা বায়োঅ্যাসিড। 

সমুদ্রের পিএইচ মাত্রা ক্রমশ হ্রাস পাওয়ার কারণে একদিকে যেমন ঝিনুক, শামুকের মতো প্রাণীদের খোলস বা ক্যালশিয়াম কার্বোনেটের আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনই প্রভাবিত হচ্ছে প্রবাল প্রাচীরের বৃদ্ধি, জলজ প্রাণীর মেরুদণ্ডের গঠন। 

সমুদ্রের এই বাস্তুতন্ত্র পৃথিবীর অন্যতম কার্বন সিঙ্ক বা কার্বন শোষক হিসাবে কাজ করে। কিন্তু অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায়, ক্রমশ কার্বন-শোষণ ক্ষমতা হারাচ্ছে সামগ্রিক জলজ পরিবেশ। শৃঙ্খল বিক্রিয়া বা চেইন রিঅ্যাকশনের মতোই যা ত্বরান্বিত করছে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়নকে। বিঘ্নিত করছে পরিবেশের ভারসাম্য। সম্প্রতি ‘প্রিসিডিংস অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি : বায়োলজিক্যাল সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছে বিজ্ঞানীমহলে…

Powered by Froala Editor