একা করোনায় রক্ষা নেই, দোসর হয়ে এসে গিয়েছে হান্টা। তবে হান্টা ভাইরাসকে এখনই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই ভাইরাস থেকে কোনো মহামারী ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা এখনই নেই। কিন্তু করোনা ভাইরাসেই যে শেষ নয়, খুব তাড়াতাড়ি আরও ভয়ঙ্কর কোনো ভাইরাসের আক্রমণ ঘটতে চলেছে, এমনটাও জানাচ্ছেন অনেকে। এমনিতেই ১৯৫০-এর পর থেকে ভাইরাসের আক্রমণ বেড়েছে অনেকটা। কখনো এইচআইভি বা কখনো ইবোলা, অথবা সার্স বা মার্স; ভাইরাসের আক্রমণে একাধিকবার মহামারীর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। করোনার মতো এত ব্যাপক আকার ধারণ না করলেও ঘটনার ঘনঘটা বেড়েছে। এবং সেই রাস্তা দিয়েই এসে গিয়েছে করোনা ভাইরাস। অতএব অদূর ভবিষ্যতে যে আরও গুরুতর কোনো মহামারীর প্রাদুর্ভাব হতে চলেছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত পরিবেশবিদরা।
আরও পড়ুন
মহামারীর জন্য ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’, ঘরে বসেই মাধ্যাকর্ষণ সূত্র আবিষ্কার নিউটনের
এখন প্রশ্ন হল, এসবের জন্য দায়ী কে? কোন পথ দিয়ে একের পর এক ভাইরাসের আক্রমণ ঘটছে সভ্যতায়? বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের অস্তিত্ব নির্ভর করে থেকেছে ৩৯ ট্রিলিয়ন মাইক্রোবায়োমের উপর। এদের অনেকেই আমাদের শরীরে উপস্থিত থাকে, অথবা মানুষের বসবাসের উপযোগী জীববৈচিত্র্যকে ধরে রাখে। তবে আশঙ্কার কথা, ইতিমধ্যে ২বিলিয়ন মাইক্রোবায়োমের অস্তিত্ব মুছে গিয়েছে। ফলে ফাটল ধরেছে মাইক্রোবায়োম চেইনে। আর সেই ফাটল দিয়েই ঢুকে পড়ছে ভাইরাস। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, পরিবেশের উপর ক্রমাগত অত্যাচার চালিয়ে মানুষ নিজেই নিজের সংকট ডেকে এনেছে।
আরও পড়ুন
৯০ বছর আগেই খোঁজ মিলেছিল করোনার, প্রথম আক্রমণ ১৯৬৫ সালে
২০১২ সালে প্রকাশিত পরিবেশবিদ ডেভিড কুয়ামেনের একটি বই, ‘স্পিলওভার: অ্যানিমাল ইনফেকশন অ্যান্ড দ্য নেক্সট হিউম্যান প্যান্ডেমিক’, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কুয়ামেনের মতে; পুরনো বাড়ি ভাঙলে যেমন ধুলো ওড়ে, তেমনই বনাঞ্চল ধ্বংস করলে উড়ে আসে ভাইরাস। অথচ মানুষ সে বিষয়ে কতটুকুই বা সচেতন হচ্ছে! মানুষের বিলাস-ব্যাসনের মূল্য দিয়ে যেতে হচ্ছে প্রকৃতিকে। ক্রমাগত শেষ হয়ে আসছে নিরক্ষীয় এবং ক্রান্তীয় বনভূমি। এর ফলে ভাইরাসের প্রকৃত আবাসস্থল হারাচ্ছে। তারা আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে আসছে মানুষের দিকে।
আরও পড়ুন
মহামারীতে ছারখার বাংলা, মৃত ৫০ হাজারেরও বেশি, বাদ গেল না সাহেবরাও
পাশাপাশি আরও একটি দিকে দৃষ্টি দিতে চাইছেন ডক্টর স্যামুয়েল মায়ার। মানুষের জন্য ভয়ঙ্কর এইসব ভাইরাস আসলে বেঁচে থাকতো অন্য কোনো প্রাণীর শরীরে। কিন্তু গত কয়েক শতকে একের পর এক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে প্রকৃতি থেকে, এবং এখনও যাচ্ছে। ফলে ভাইরাস তার মতো করে মিউটেশন ঘটাচ্ছে, এবং মানুষের পৃথিবীব্যাপী অস্তিত্বই সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে। সবসময় যে তা মহামারীর আকার ধারণ করছে, এমন নাও হতে পারে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ভাইরাসের আক্রমণে প্রতি বছর প্রাণ হারাচ্ছেন ৭ লক্ষ মানুষ। আর এই সংখ্যা ১৯৫০ সালের পর থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এই ৭০ বছরে অন্তত ৩০টি নতুন ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছে মানুষ। তার মধ্যে এইচআইভি, ইবোলা, সার্স, মার্সের মতো মহামারী তো আছেই।
আরও পড়ুন
করোনার পর এবার হান্টা ভাইরাসের আক্রমণ, মৃত ১, বাড়ছে আতঙ্কও
অতএব একটা কথা প্রত্যেকের বক্তব্যেই পরিষ্কার, প্রকৃতিকে বাঁচাতে না পারলে এমন সংকট আবারও এসে পড়বে। আর এর মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটা বড় সমস্যা তো বটেই। এতো বেশি সংখ্যক মানুষের খাদ্যের জোগান দেওয়ার প্রশ্নও আছে। তবে বিজ্ঞানীদের কাছে ইতিমধ্যে যথেষ্ট প্রযুক্তি আছে বলেই দাবি করছেন তাঁরা। শুধু প্রয়োজন একটু সচেতনতা, আর উপযুক্ত পরিকল্পনার রূপায়ণ। আর এই কাজে অবশ্যই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে প্রতিটা দেশের সরকারকে। সেইসঙ্গে বড় কম্পানিগুলিকেও। বাতাসে কার্বনের নিঃসরণ কমাতে হবে খুব দ্রুত। আর বনভূমির দিকেও যথেষ্ট নজর দিতে হবে। ঘন বনভূমি এবং বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে যথাযথভাবে। আর এই কাজে একেবারেই দেরি করা যাবে না। আমাদের হাতে আর নষ্ট করার মতো সময় সত্যিই নেই। করোনা ভাইরাসের কোনো চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি এখনও। আর যদি হয়ও, তাহলেও সেই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না। কাউন্ট-ডাউন শুরু হয়ে যাবে পরবর্তী ভাইরাসের আক্রমণের।