একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে যেসকল অকুতোভয় দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, আবু বকর সিদ্দিকী বাচ্চু অন্যতম। যিনি বাচ্চু ভাই নামে পরিচিত। একাত্তরে নারায়ণগঞ্জের দেলপারা গ্রামে তার নিজের বাড়িতে ছিল বেস ক্যাম্প। আলমারি ভরা ছিল অস্ত্র আর গ্রেনেড। তার ছোট্ট টিনের ঘরে ছিল ২৫-৩০ জন মুক্তিবাহিনীর আশ্রয়স্থল, যাদের মনে ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আবার তাদের মধ্যে অনেকেরই ছিল আর্থিক ও খাবারের সংকট, যা মরহুম আবু বকর সিদ্দিকী নিজের খামার থেকে দিয়ে তাদের পরিবারের অভাব দূর করতেন। পাকিস্তানি বিশাল বাহিনী তাদের ক্যাম্প ঘেরাও করলেও সফল হতে পারেনি কারণ, আবু বকর সিদ্দিকীর বাড়ির চারদিকে ছিল পুকুর এবং খালে ঘেরা, ঘন গাছপালা থাকায় এবং মুক্তিবাহিনীর উপস্থিতি টের পাওয়ায় পরবর্তীতে আর কোনো পাকিস্তানি বাহিনী সেখানে যাওয়ার সাহস করেনি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আবু বকর সিদ্দিকী মনে করেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষাই কমাত্র উপায়। তিনি ও তার বন্ধু হাজী আবু তাহেরের উদ্যোগে, হাজী মিসির আলী ইউনিভাসিটি নামে একটি টিনশেড ভবন নির্মাণও হয় কিন্ত কম সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকায় শিক্ষকদের বেতন দিতে মহা সংকটে পড়তে হয়। তখন আবু বকর সিদ্দিকী ও তার স্ত্রী সুলতানা বেগম তাদের নিজস্ব খামার থেকে মুরগি ও গরু বিক্রি করে শিক্ষকদের বেতন যোগান দিতেন।
শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য নিজ খরচে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে নিয়ে যেতেন। এই কলেজ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অনেকেই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এবং সরকারি কমকর্তা হয়েছেন।
আবু বকর সিদ্দিকী ছিলেন একজন নিবেদিত প্রাণ এবং একজন সাদা মনের মানুষ। যিনি সুশিক্ষিত সমাজের স্বপ্ন রচনা করে গেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। ২০১৫ সালের ১৫ই আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। একাত্তরের এই বীর সেনার প্রতি শ্রদ্ধা।
আরও পড়ুন
প্রয়াত বাংলাদেশের প্রথম মহিলা আলোকচিত্রী সাইদা খানম
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
প্রয়াত বাংলাদেশের প্রথম বাঁ-হাতি স্পিনার রামচাঁদ গোয়ালা