লিংকন-হত্যার মাত্র এক বছরের মাথায় খুন তাঁর পোষ্য সারমেয়ও!

১৮৬৫ সাল। ক্যালেন্ডারের পাতায় দিনটা ছিল ১৫ এপ্রিল। স্ত্রী মেরির সঙ্গে ফোর্ডস থিয়েটারের প্রেসিডেন্সিয়াল বক্সে বসে নাটক দেখছিলেন আব্রাহাম লিংকন (Abraham Lincoln)। সামনে মঞ্চস্থ হচ্ছে ‘জুলিয়াস সিজার’। ক্লাইম্যাক্সে উপস্থিত হয়েছে নাটকের প্রেক্ষাপট। এমন সময় স্টেজ থেকে লাফিয়ে নামলেন অভিনেতা জন উইলকেস বোথ। পকেট থেকে বার করে আনলেন .৪৪ ক্যালিবারের ডেরেঞ্জার পিস্তল। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে মুহূর্তে ঝলসে উঠল তাঁর বন্দুক। লক্ষ্য, লিংকনের মস্তিষ্ক। পাশের চেয়ারে বসে থাকা আর্মি অফিসার রাষ্ট্রপতিকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে, তাঁকেও শিকার হতে হল ছুরিকাঘাতের।

হ্যাঁ, এভাবেই আততায়ীর হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষোড়শ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনকে। তবে শুধু আব্রাহাম লিংকন নয়, অ্যাসাসিনেশনের শিকার হয়েছিলেন লিংকন পরিবারের আরও এক সদস্য, ফিডো (Fido)। না, কোনো মানুষ নয়। বরং, ফিডো চতুষ্পদ। আব্রাহামের মৃত্যুর ঠিক এক বছরের মাথায় খুন (Assassinated) হতে হয়েছিল তাঁর প্রিয় পোষ্য সারমেয়কেও (Pet Dog)।

শুধুমাত্র ক্রীতদাস প্রথার অবলুপ্তি কিংবা ইউনিয়ন ব্যবস্থার পরিবর্তন নয়, পশু অধিকার এবং পশু কল্যাণের ক্ষেত্রেও পথিকৃৎ ছিলেন লিংকন। এমনকি নিজেরও একাধিক পোষ্য ছিল লিংকনের। আব্রাহামের রাষ্ট্রপতি হওয়ার কয়েক বছর আগে লিংকন পরিবারে পা রেখেছিল ইয়েলো মংগ্রেল প্রজাতির সারমেয়টি। তবে অন্যতম প্রিয় পোষ্য হলেও, রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর ফিডোকে দূরে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন লিংকন। কেন না, তাঁকে যে দেশের কাজে অধিকাংশ সময়ই দৌড়াদৌড়ি করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রান্তে প্রান্তে। আর পরিচর্যার অভাবে যে একাকিত্ব বাসা বাঁধতে পারে ফিডোর মনে। এমন চিন্তাভাবনা থেকেই ফিডোকে সবচেয়ে নিকট বন্ধু জন স্প্রিংফিল্ড রোলের হাতে তুলে দিয়েছিলেন লিংকন। তবে শত ব্যস্ততার মধ্যেও স্প্রিংফিল্ডের বাড়িতে মাঝেমধ্যেই ফিডোর সঙ্গে দেখা করতে হাজির হতেন লিংকন। এমনকি ফিডোই প্রথম কোনো মার্কিন রাষ্ট্রপতির পোষ্য, যার ছবি তোলা হয়েছিল ক্যামেরায়।

অন্যদিকে, বন্ধুকে দেওয়া কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন স্প্রিংফিল্ড। লিংকনের মৃত্যুর পরেও ফিডোর পরিচর্যার সম্পূর্ণ দায়ভার ছিল স্প্রিংফিল্ডের কাঁধেই। কিন্তু নিয়তিকে কেই বা আটকাতে পারে? পারেননি জন স্প্রিংফিল্ডও। সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে। তার মধ্যেও রুটিন মেনেই ফিডোকে পার্কে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলেন স্প্রিংফিল্ড। পার্কের বেঞ্চে বসে থাকা এক ব্যক্তির ডাক শুনে নিছকই আদর খেতে এগিয়ে গিয়েছিল মিশুকে ফিডো। বাধা দেননি স্প্রিংফিল্ডও। কিন্তু মুহূর্তে যে রক্তক্ষয়ী হয়ে উঠবে পরিস্থিতি, সে ব্যাপারে ন্যূনতম ধারণা ছিল না তাঁর। আদতে যে ওই ব্যক্তি মদ্যপ, তাও ঘুণাক্ষরে বুঝতে পারেননি স্প্রিংফিল্ড। ফিডোর দোষ ছিল, কাদা পায়েই ওই ব্যক্তির গায়ে উঠে পড়া। আর ফিডোর এই আচরণেরই নৃশংস প্রত্যুত্তর দিয়েছিলেন ওই মদ্যপ ব্যক্তি। পকেট থেকে মুহূর্তে বেরিয়ে এসেছিল ধারালো ছুরি। তারপর একের পর এক কোপ। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় লিংকনের প্রিয় পোষ্য।

আরও পড়ুন
মুজতবার ভ্রমণ, নেতাজি-অন্তর্ধান থেকে ‘বাঙালি বউ’-এর হত্যা : কাবুলের বঙ্গ-যোগ

অবশ্য সেসময় হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া কেউ-ই খোঁজ রাখেনি ফিডোর। পরবর্তীতে, রোল পরিবারেরই এক সদস্য প্রকাশ্যে এনেছিলেন এই ঘটনার কথা। টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল সেই সাক্ষাৎকারও। 

আরও পড়ুন
ধর্মান্তকরণে ব্যর্থ হয়ে হত্যা? পরিত্যক্ত স্কুলে ২১৫টি শিশুকঙ্কাল, বাড়ছে রহস্য

হোয়াইট হাউসে না থাকায় ফিডোর ‘প্রেসিডেন্সিয়াল পেট’ হয়ে ওঠা হয়নি কোনোদিনই। তবে বিশ শতকের প্রকাশিত সেই সাক্ষাৎকারেই যেন নড়েচড়ে বসে মার্কিন প্রশাসন। সরকারিভাবে ‘প্রেসিডেন্সিয়াল পেট’-এর তকমা পায় ফিডো। মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল পেট মিউজিয়ামেও স্মারক স্থাপিত হয়েছিল ফিডোর নামে। আজও আমেরিকার বুকে পোষ্যের নামের জনপ্রিয়তার নিরিখে সবথেকে উপরেই রয়েছে ‘ফিডো’ নামটি। তবে এই জনপ্রিয়তয়া শুধুমাত্র লিংকনের পোষ্য হওয়ার সুবাদে নয়। বরং, মালিকের মতো তারও ট্র্যাজিক পরিণতিই অমর করে রেখেছে ষোড়শ প্রেসিডেন্টের পোষ্য সারমেয়টিকে…

আরও পড়ুন
ফাঁসির আগেই বিষপ্রয়োগে হত্যা! বীরসা মুন্ডার দেহ গোপনে পুড়িয়ে দিল ব্রিটিশ সরকার

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More