প্রতিবছরের মতোই নরওয়ের অসলো থেকে ঘোষণা হয়ে গেল ২০১৯ এর নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপকের নাম। নোবেলের এই ক্যাটাগরি নিয়ে প্রত্যেকের আগ্রহই ছিল চরমে। এবছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ।
কিছুদিন ধরেই সম্ভাব্য বিজয়ীদের মধ্যে মাত্র ১৬ বছর বয়সী পরিবেশপ্রমী গ্রেটা থানসবার্গ ও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা অর্ডার্নের নাম ঘোরাফেরা করছিল। গ্রেটা এ-বছর এতোটাই জোরালো দাবিদার ছিল যে, বিশ্বব্যাপী অনেক অনলাইন ওয়েবসাইট বেশ বড় অঙ্কের বাজিও ধরেছিল তাকে নিয়ে। কিন্তু শেষমেশ গতকাল স্থানীয় সময় ১১টা নাগাদ নোবেল কমিটি ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রীকেই বেছে নেন। এ-বছর নোবেল শান্তির জন্য প্রায় ৩০১টি মনোনয়ন জমা পড়ে। যার মধ্যে ছিলেন ২২৩ জন ব্যক্তি ও ৭৮টি প্রতিষ্ঠান। যদিও কমিটি বিজয়ীর নাম প্রকাশের আগে মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ্যে আনছে না গত ৫০ বছর ধরে।
পূর্ব আফ্রিকার এই দেশ ইথিওপিয়া গত বছর প্রতিবেশী দেশ ইরিত্রিয়ার সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। নতুন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যেই এমন সিদ্ধান্ত চমকে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। ১৯৯৮ -২০০০ এই দু'বছর এই দুদেশের সীমান্ত যুদ্ধের জন্য বলি হতে হয়েছে অনেক মানুষকে। সেই সময় থেকে ২০১৮ পর্যন্ত এই ২০ বছরে অন্তত সেদেশের ৭০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এই বিভৎস পরিস্থিতিতে। এখন সেসব স্তিমিত, দু'দশকের যুদ্ধের ইতি ঘটিয়ে এই শান্তিচুক্তি যেমন আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে উন্নত করেছে তেমনি তীব্র অচলাবস্থায় ইতি টেনেছে। এই চুক্তি স্বাক্ষর ছাড়াও ইথিওপিয়ার অর্থনীতির ব্যপক সংস্কার করেন আবি আহমেদ ২০১৮-তে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই, যা দেশটির নিয়ন্ত্রিত ও অতিমাত্রায় কঠিন সামাজিক ব্যবস্থায় অক্সিজেন জোগায়। এছাড়াও সে-দেশের বিরোধী দলের কারাবন্দি নেতাদেরও মুক্তি দেন তিনি।
৪৩ বছর বয়সী এই নোবেল জয়ীর জন্ম এক গরীব মুসলমান কৃষকের ঘরে, তাঁর মা ছিলেন খ্রিস্টান। চরম দারিদ্রে কাটিয়েও তাঁর ছিল প্রযুক্তির উপর এক অপার মুগ্ধতা। কিশোর বয়েসে তিনি সামরিক বাহিনীর এক রেডিও অপারেটর হিসেবেও কাজ করেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী পদ লাভের আগে লেফটেন্যান্ট কর্নেল খেতাবও পেয়েছিলেন। ইথিওপিয়ার সাইবার গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন তিনি।
দরিদ্র কৃষকের ঘর থেকে উঠে এসে গোয়েন্দা আধিকারিক, সেখান থেকে আফ্রিকার একটি দেশের অবিস্মরণীয় নেতা তথা বাস্তবিক রূপকার এই আবি।
কাঁটাতারের লড়াই, দুদেশের ভেঙে যাওয়া সম্পর্ককে জুড়ে দেওয়া এই মানুষটির সমস্ত লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েই তাঁকে এই পুরস্কার দিল নোবেল কমিটি।
আগামী ১০ ডিসেম্বর স্যার আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যু বার্ষিকীতে স্টকহোম ও অসলোতে এক উজ্জ্বল অনুষ্ঠানে সমস্ত বিজয়ীকে পুরস্কার প্রদান করা হবে। এই স্বীকৃতি হয়তো তৃতীয় বিশ্বের লড়াই করে যাওয়া সমস্ত মানুষগুলোর বুকে সাহস এনে দেবে কিছুটা।