সে অনেককাল আগের কথা। মিসিসিপির উপত্যকায় এক সমৃদ্ধশালী নগর ছিল। আমেরিকা বা মেক্সিকোর জন্ম হয়নি তখনও। রেড ইন্ডিয়ানদের দেশে পা রাখেননি কলম্বাস। সেই নগরের নাম ছিল কহোকিয়া। মূলত তীর্থস্থান হিসাবেই গড়ে উঠেছিল। কিন্তু অচিরেই এই নগরকে ঘিরে গড়ে ওঠে বিরাট এক জনবসতি। ব্যবসার ক্ষেত্র জমে ওঠে। আর পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়ায় যে সেইসময় লন্ডনের যা জনবসতি ছিল, তার থেকে কহোকিয়ার জনবসতি ছিল বেশি। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। মিসিসিপি নদীর উপত্যকায় 'বর্বর' উপজাতির মানুষরাই বিরাট এই নগর তৈরি করেছিল।
মোটামুটি দশম অথবা একাদশ শতাব্দী নাগাদ এই নগরের পত্তন শুরু হয়। আয়তন ছিল মোটামুটি ছয় থেকে নয় বর্গমাইল। আর এখানে নাগরিকের সংখ্যাও ছিল ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ পর্যন্ত। এই সংখ্যাটা যে তৎকালীন লন্ডন শহরের জনসংখ্যার থেকেও বেশি, সে কথা আগেই বলেছি। নগরের যেটুকু নিদর্শন পাওয়া যায়, তাতেই বোঝা যায় খুব সুন্দর পরিকল্পনা করে বানানো হয়েছিল বসতি। বহু ধরনের মানুষের বাসও ছিল। আকারে-প্রকারে ইউরোপের অনেক বড়ো বড়ো শহরকে হারিয়ে দিতে পারত কহোকিয়া।
এভাবেই দিব্যি চলে যাওয়ার কথা ছিল। চলছিলও। কিন্তু হঠাৎ কোত্থেকে কী হল, জনশূন্য হয়ে পড়ল কহোকিয়া নগর। এমন সমৃদ্ধশালী নগর মানুষ কেন পরিত্যাগ করল, সে রহস্যের সমাধান আজও হয়নি। গবেষণা চলছে নিরন্তর। অনেক ভাবনাই আসছে ঐতিহাসিকদের মাথায়। কিন্তু কোনোটাই ঠিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারছেন না। অনেকে মনে করেন, এক জায়গায় বহু উপজাতির বাস ছিল। তাই শুরু হয়েছিল ঝামেলা। সেখান থেকেই ক্রমশ গৃহযুদ্ধের চেহারা নেয়। আর সেই গৃহযুদ্ধেই এই নগরের ইতিহাস শেষ হয়ে গিয়েছিল। আবার অনেকের মতে প্রাকৃতিক দুর্যোগেই ধ্বংস হয়ে যায় এই সভ্যতা। কেউ কেউ আবার মনে করেন, কোনো প্রাচীন কুসংস্কারের কোপেই সমস্ত ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন নাগরিকরা। আসল সত্য কী, তা অবশ্য কেউই জানেন না।
তবে এটুকু জানা যায়, যে আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে ইউরোপীয়রা প্রবেশ করলে এই ভগ্নপ্রায় নগর তাঁদের নজরে পড়ে। মোটামুটি ১৩৫০ সাল থেকে পরিত্যক্ত ছিল এই নগর। তার তিনশ বছর পর, ১৬৫০ নাগাদ আবার গড়ে ওঠে বসতি। তবে এই নগরের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের সন্ধান সেভাবে পাননি কেউই। আজও ইতিহাসের কাছে এক রহস্য এই কহোকিয়া নগর।
Powered by Froala Editor