আশির দশকের শুরুর দিক সেটা। গুজরাটের খিরা জেলার রায়োলি গ্রাম। দলবল নিয়ে সেখানে হাজির হয়েছিলেন জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার বেশ কিছু বিজ্ঞানী। তার কিছুদিন আগেই গবেষণায় জানা গিয়েছিল, রায়োলির পেটের ভেতর লুকিয়ে রয়েছে বহুমূল্য খনিজ। সেই খনিজের অনুসন্ধান করতেই শুরু হল খনন। তবে খনিজ নয়, বরং খননকার্যে পাওয়া গেল গোলাকৃতি বেশ কিছু পাথর। বিশ্লেষণে জানা গেল, আদতে সেগুলি ডাইনোসরের ডিম।
সেবার গবেষকদের সেই দলে ভিড়েছিলেন এক ছোট্ট কিশোরীও। আলিয়া সুলতানা ববি (Aaliya Sultana Babi)। বয়স বড়োজোর ৫-৬ বছর। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের রাজপরিবারের মেয়ে হওয়ার সুবাদেই গবেষকদের সঙ্গে প্রত্নক্ষেত্র ঘুরে দেখার সুযোগ পেতেন তিনি। বর্তমানে গুজরাটের এই প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নক্ষেত্র এবং ভারতের একমাত্র জুরাসিক পার্কের রক্ষাকর্তা আলিয়াই। স্থানীয়দের কাছে তাঁর পরিচয় ‘ডাইনোসর প্রিন্সেস’ (Dinosaur Princess)।
রাজকুমারী থেকে ‘ডাইনোসর প্রিন্সেস’ হয়ে ওঠার এই গল্প এক কথায় রূপকথার মতোই। তবে সেই গল্পে যাওয়ার আগে তাঁর আরেকটা পরিচয়ও জানিয়ে রাখা যাক। আলিয়া অভিনেত্রী পারভিন ববির আত্মীয়া।
ডাইনোসর নিয়ে তাঁর আগ্রহ ছিল ছোটোবেলা থেকেই। গুজরাটের গ্রামে ডাইনোসরের ডিমের হদিশ যেন আরও কৌতূহল বাড়িয়ে দিয়েছিল তাঁর। প্রত্নতাত্ত্বিকদের সঙ্গে থাকতে থাকতে জীবাশ্ম খননের পদ্ধতি, ডাইনোসর প্রজাতিদের বৈশিষ্ট্য ও অন্যান্য তথ্যও বেশ ভালো মতোই আত্মস্থ করেছিলেন আলিয়া। বুঝে গিয়েছিলেন রায়োলির ঐতিহাসিক গুরুত্ব। তাই একটু বড়ো হওয়ার পরেই সাধারণ মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। সেইসঙ্গে মাঝে মধ্যে তিনিও হাত লাগাতেন প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাজে। কিন্তু রাজ পরিবারের মেয়ে হয়ে কি এভাবে মাঠে-ঘাটে ঘুরে বেড়ানো মানায়?
আরও পড়ুন
গ্রহাণুর আঘাতেই ডাইনোসরের অবলুপ্তি, প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেলেন বিজ্ঞানীরা
না, আলিয়ার এই উৎসাহকে প্রশ্রয় দেয়নি গুজরাটের ববি রাজপরিবার। বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তবে তাতে এতটুকু ভাটা পড়েনি ডাইনোসর-প্রীতিতে। আলিয়া যখন গুজরাটে ফেরেন, ততদিনে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ডাইনোসর হ্যাচেরি হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে রায়োলি। সাধারণ মানুষরাও অনেকেই জেনে গেছেন কী দুর্মূল্য সম্পদ লুকিয়ে রয়েছে সেখানে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়েছে অবৈধ খনন, প্রত্নসামগ্রী চুরির ঘটনা।
আরও পড়ুন
কুমিরের পেটে ডাইনোসর! এমন জীবাশ্মের সন্ধান এই প্রথম
সেই থেকে স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে এই গ্রামের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন আলিয়া। গ্রামবাসীদের থেকে উদ্ধার করেন চুরি যাওয়া বহু ডাইনোসরের ডিমের জীবাশ্ম। সেইসঙ্গে ডাইনোসর নিয়ে গবেষণাও শুরু করেন তিনি। পরে জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রত্নক্ষেত্র পরিচর্যার দায়িত্ব তুলে দেন আলিয়ার হাতে। বর্তমানে শুধু রায়োলির ডিগ্রিধারী ডাইনো-গবেষকই নন, একমাত্র ইংরাজি বলা ট্যুরিস্ট গাইডও আলিয়া। এমনকি তাঁর কাজে মুগ্ধ হয়ে, আস্ত একটি ডাইনোসরের ডিমও তাঁকে উপহার দিয়েছে জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। সবমিলিয়ে বলতে গেলে গুজরাট তথা ভারতের একমাত্র এই জুরাসিক পার্কের মধ্যমণি তিনিই। অস্বীকার করার জায়গা নেই, আলিয়া না থাকলে ইতিহাস সংরক্ষণ তো বটেই, আধুনিক গবেষণার পরিসরও কমে আসত অনেকটাই…
আরও পড়ুন
ডাইনোসরের পরিণত ডিম, ভিতরে আস্ত ভ্রূণ! অবাক প্রত্নতাত্ত্বিকরা
Powered by Froala Editor