এ যেন সত্যি সত্যিই অভিন্নহৃদয়। এক নাক, একইরকম মুখ। এমনকি চোখের পাতা অব্দিও এক। একজনকে কোলে নিতে চাইলে চলে আসছে অন্যজনও। ২৮ জুলাই নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল এমনই দুই শিশু। এই ধরণের বিষেশ শিশুকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘থোরাকোফেগাস’। তবে এক্ষেত্রে তা ছিল আরও বিরলতম ‘থোরোকো ওমো হ্যালোপেগাস’।
অর্থাৎ সদ্যোজাত দুই বোনের যকৃৎ এক থাকলেও তাদের পাকস্থলী ছিল আলাদা। হৃদয়ও ছিল একটাই। বুকের সঙ্গে লাগানো ছিল বুক। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকের কথায়, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় এদের হৃদয়ের অলিন্দ এবং নিলয়ের মাঝে পর্দাটি নেই। এই দুটি বাচ্চারও হৃদপিণ্ডের গঠন স্বাভাবিক ছিল না। ফুসফুস থেকে হার্টে পরিশুদ্ধ রক্ত আসে। দুটি শরীরে একটিমাত্র হৃদপিণ্ড হওয়ার দরুন পরিশুদ্ধ রক্তে ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। এসব ক্ষেত্রে একটি বাচ্চা মারা গেলে সঙ্গে সঙ্গেই মারা যায় অন্যটিও। পঞ্চাশ হাজারের মধ্যে একজন এমন বিরল যমজের জন্ম হতে পারে।
একই হৃদপিণ্ড নিয়ে দু’টো শিশু ভূমিষ্ঠ হলে ঘনঘন তাদের হৃদপিণ্ডে সংক্রমণ হয়। সিংহভাগ ক্ষেত্রে সেই সংক্রমণের ফলে মৃত্যু হয় দু’টি শিশুরই। এক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে। ২৮ জুলাই নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ভূমিষ্ঠ হওয়া দুটি শিশু বেঁচেছিল মাত্র ২৪ ঘণ্টা। যদিও তাতে কষ্ট পাননি উত্তর ২৪ পরগণার মিলনবাজার কৃষ্ণপুর এলাকার শিশুটির মা-বাবা। তাঁদের কথায়, বেঁচে থাকলে ওরা কষ্ট পেত। এভাবে একটা হৃদয় নিয়ে কষ্ট পেয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে ওরা মুক্তি পেয়েছে।
জানা গিয়েছে, সিজারিয়ান সার্জারিতে জোড়া সন্তানের মা হন ওই প্রসূতি। এই ক্ষেত্রে ভূমিষ্ঠ যমজ ছিল থোরাকো ওমো হ্যালোপেগাস। অর্থাৎ এদের যকৃৎ একটা থাকলেও পাকস্থলী আলাদা। এমন শিশুদের শরীরে একই ক্রোমোজোমের গঠন দেখা যায়। অগত্যা, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ‘সীতা-গীতা’-কে চোখের জলে বিদায় জানাতে বাধ্য হল কলকাতা।
আরও পড়ুন
একাধিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ভারতের প্রায় ২৪ লক্ষ শিশু, চাঞ্চল্যকর তথ্য জাতিসংঘের
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
একজোড়া যমজ সন্তানের জন্ম দিলেন মা, বিরল ঘটনা টেক্সাসে