আলোয় আলোয় সেজে উঠেছে মহানগরী। রাস্তায় নেমেছে মানুষের ঢল। গান বাজছে পাড়ায় পাড়ায়। অথচ, গৃহবন্দি তাঁরা। তাঁরা বলতে, সেইসকল বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা (Old People), যাঁদের সামর্থ্য নেই একলা এই উৎসবের শহর ঘুরে দেখার। কারোর সন্তান-সন্ততিরা দেশ ছেড়েছেন কর্মসূত্রে। কেউ আবার দিনযাপন করেন বৃদ্ধাশ্রমে। এবার তাঁরাও দল বেঁধে পথে নামলেন ঠাকুর দেখতে। এক অদ্ভুত পুজো-পরিক্রমার সাক্ষী হল কলকাতা (Kolkata)। নেপথ্যে, ‘রিয়েলটেক নির্মাণ’ (Realtech Nirman Pvt Ltd) সংস্থা।
২০১০ সাল সেটা। প্রথমবারের জন্য এই অদ্ভুত পুজো পরিক্রমার আয়োজন করেছিলেন ‘রিয়েলটেক নির্মাণ’-এর কর্ণধার শিশির গুপ্ত (Shishir Gupta)। সে-বছর ঠাকুর দেখতে চেয়ে আবদার করেন বসেন তাঁর দাদু-ঠাকুমা। তাঁদের এই অনুরোধই ভাবিয়ে তুলেছিল শিশিরবাবুকে। সত্যিই তো, প্রবীণ ব্যক্তিদেরও কি ইচ্ছে করে না এই উৎসব-আয়োজনের অংশ হয়ে উঠতে? অথচ, পুজোর শহর ঘুরে দেখার কোনো সঙ্গী নেই তাঁদের, নেই সামর্থ্যও।
না, শুধু দাদু-ঠাকুমাকে নিয়েই সে-বার শহর পরিক্রমায় বেরোননি তিনি, সঙ্গী করে নিয়েছিলেন শতাধিক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে। যাঁদের ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম। ৮টি ভলভো বাস ভাড়া করে তাঁদের ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন কলকাতার খ্যাতনামা দুর্গামণ্ডপগুলি। আজও ছেদ পড়েনি সেই রীতিতে। দুর্গা পুজোর পঞ্চমীটা শহরের নিঃসঙ্গ প্রবীণদের জন্যই বরাদ্দ রাখেন শিশিরবাবু।
অবশ্য গত দু’বছর করোনাভাইরাসের প্রকোপে সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল এই পুজো পরিক্রমা। বদলে ছোটো ছোটো দলে বিভক্ত হয়ে বৃদ্ধাশ্রমগুলিতে গিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের হাতে উপহার তুলে দিয়েছিলেন শিশিরবাবু ও তাঁর সংস্থার অন্যান্য সদস্যরা। সেইসঙ্গে আয়োজন করেছিলেন শারদীয় আড্ডার। ভিডিও স্ট্রিমিং-এর মাধ্যমে দেখানো হয়েছিল কলকাতার নানান পুজো-প্যান্ডেলের হাল-হাকিকত।
বর্তমানে খানিকটা হলেও প্রকোপ কমেছে করোনার। উঠে গেছে সরকারি বিধিনিষেধও। আর সেই কারণেই ফের পুরনো ছন্দ ফিরে পেল ‘রিয়েলটেক নির্মাণ’-এর এই পুজো পরিক্রমা। আজ সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ, প্রায় এক হাজার বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে সঙ্গে নিয়েই আমহার্স্ট স্ট্রিট থেকে শুরু হয় এই অভিনব পরিক্রমা। চলবে, রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। তবে শুধুই কি দেবীদর্শন করানো? নিঃসঙ্গতা, একাকিত্বকে সরিয়ে জীবনসায়হ্নে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর কাছে যেন ভালোবাসার উষ্ণতা পৌঁছে দিচ্ছে শিশিরবাবুর এই উদ্যোগ…
Powered by Froala Editor