“আমাদের বাতিল কাপড় কিন্তু পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে একটা বড়ো ভূমিকা রাখে। প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে এরকম বাতিল কাপড় সহজেই উপলব্ধ। বিভিন্ন স্থান থেকে সেই উপাদান একত্রিত করে আমি তাকে শিল্পে রূপ দিই। তারই সম্ভার নিয়ে আমার আসন্ন প্রদর্শনী।”
কথা হচ্ছিল শিল্পী সোহিনী গুপ্তের (Shohini Gupta) সঙ্গে। যিনি দশ বছর ধরে বাতিল, পরিত্যাজ্য জিনিসকে পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে রূপ দিয়ে চলেছেন সৃজনশীল শিল্পে। গয়না, কাপড়, গৃহস্থালির বিভিন্ন জিনিস, কাঁথা, পর্দা, কী নেই সেই তালিকায়। সে-সব নিয়েই আগামী ৮-৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে চলেছে তাঁর প্রদর্শনী ‘প্যাচওয়ার্ক টেলস’ (Patchwork Tales)। ডোভার লেনের ‘দ্য জি’স প্রেসিনক্ট’-এ (The Z's Precinct) আয়োজিত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে দুপুর বারোটা থেকে সন্ধে সাতটা পর্যন্ত। সঙ্গে থাকবে সোহিনীর আঁকা ছবির সমারোহ।
সোহিনীর প্রথাগত শিল্পশিক্ষার সূত্রপাত শান্তিনিকেতনের কলাভবনে। সেখানে থাকাকালীন দীর্ঘ চর্চা করেছেন ছবি আঁকা, ভাষ্কর্য নির্মাণ-সহ বিভিন্ন বিষয়ে। পরে যাত্রা শুরু করেন সম্পূর্ণ নিজের পথে। তিনি বলছিলেন, “আমার বিশেষত্ব ছিল ‘প্রিন্ট মেকিং’-এ। সে অর্থে আমি নিজের ক্ষেত্র থেকে প্রায় সম্পূর্ণ সরে গেছি। একেবারে নিজস্ব এক পথ নির্মাণ করেছি। সেটা যে খুব পরিকল্পনামাফিক করেছি তা নয়, কিছুটা খেলাচ্ছলেই তার সূত্রপাত।” কিন্তু সচেতনভাবে না হলেও কলাভবনের শিক্ষা ও পরিবেশ তাঁকে পরবর্তীতে প্রভাবিত করেছিল বহুক্ষেত্রে।
২০১২ সাল নাগাদ শুরু করেন গয়না বানানো। তৈরি করেন নিজস্ব ব্র্যান্ড ‘মেলা বাই সোহিনী’ (Mela by Sohini)। ধীরে ধীরে সরে আসেন কাপড় প্রস্তুতের ক্ষেত্রে। তারপর দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন। ইতিমধ্যে তাঁর কাজের পরিধি ও পরিমাণ দুই-ই বেড়েছে। শিল্পী হিসেবে নিজেকে ক্রমশ নতুন করে গড়েছেন। বদলেছে তাঁর কাজের ধরন। স্বাভাবিকভাবেই নিজের শিল্পীসত্তার জন্য প্রয়োজন পড়ছিল একটি বৃহত্তর মঞ্চের। ‘প্যাচওয়ার্ক টেলস’ তাঁর প্রথম একক প্রদর্শনী।
সেই প্রসঙ্গেই তিনি বলছিলেন নামকরণের তাৎপর্য বিষয়ে। “প্যাচওয়ার্ক আসলে বয়নশিল্পের একটি পদ্ধতি। আমি বিভিন্ন জায়গার উপাদান একসঙ্গে সেলাই করে নতুন জিনিস তৈরি করি।” পাশাপাশি তাঁর কাজের পরিধিও যথেষ্ট বিস্তৃত। গয়না, কাপড়, কাঁথা, ছবি ইত্যাদি বিবিধ শিল্প আঙ্গিককে তিনি ছুঁয়ে দেখেছেন বহুভাবে। ‘প্যাচওয়ার্ক টেলস’-এর প্রদর্শনীর মাধ্যমে তাঁর সকল নির্মাণকে একত্রিত করে তুলে ধরবেন দর্শকের সামনে। ফলে এও এক ধরনের ‘প্যাচওয়ার্ক’। গত এক বছরের পরিকল্পনা ও পরিশ্রম রূপ পাবে তার মধ্যে দিয়ে। যদিও এখানে থাকছে তাঁর দীর্ঘ বারো বছরের বহুবিধ কাজ।
একই সঙ্গে একজন শিল্পীর চিরাচরিত দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়েও যেতে হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। শিল্পকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পুঁজির প্রয়োজন ঠিকই। কিন্তু তথাকথিত পণ্য হিসেবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে একটা দোলাচলতা কাজ করে অনেক ক্ষেত্রেই। কীভাবে একটা ভারসাম্য বজায় রেখে উভয়ের মেলবন্ধন ঘটানো যায়? দীর্ঘ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সোহিনী আজও শিখে চলেছেন তার পদ্ধতি।
সেই সব নিয়েই আয়োজিত হতে চলেছে দু’দিনের প্রদর্শনী। একদিকে পরিবেশচিন্তা, অন্যদিকে ‘প্যাচওয়ার্ক’ শিল্পের ভিন্নতর রূপ নিয়ে যেখানে উপস্থিত থাকবেন সোহিনী। তাঁর প্রদর্শনী যে ডিসেম্বরের শহরে নতুন ভাবনা নিয়ে আসতে চলেছেন, এ কথা বলাই বাহুল্য...
Powered by Froala Editor