করোনায় আক্রান্ত গোটা বিশ্ব। দেশ জুড়ে কার্যত লকডাউন। পেটের চিন্তা যে সবার আগে – এই আকালে সাধারণ মানুষের মুখে সে কথাই ফিরে আসছে বারবার। তবুও এর মধ্যেই দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন সমাজের বহু মানুষ। কিন্তু যৌনকর্মীদের নিয়ে এতদিন বিশেষ ভাবিত ছিলেন না কেউই। আজও সমাজে নিচু চোখে দেখা হয় এই পেশাকে, আর তাদের সাহায্য করতেই এগিয়ে এলেন দমদমের কিছু বাসিন্দা ও তাঁদের বন্ধুরা। এই কঠিন সময়েও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এমন ঘটনার সাক্ষী রইল কলকাতা শহর।
কলকাতা তথা এশিয়ার সর্ববৃহৎ রেড লাইট অঞ্চল সোনাগাছির যৌনকর্মীদের জন্যে টাকা তুলে তাঁদের দেওয়া হল চাল, ডাল ও অনান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। লড়াই শুরু হয়েছিল ফেসবুক থেকেই। দমদমের বাসিন্দা অর্জুন সেনগুপ্ত, তাঁর ছেলে নির্মাল্য ও তাঁর বন্ধুরা ফেসবুকেই সাধারণ মানুষের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন জানান। আর তাতেই অভূতপূর্ব সাড়া মেলে। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলা দুর্বার মহিলা সমিতির সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই উদ্যোগটিতে সামিল হন তাঁরা।
প্রহরকে নির্মাল্য জানালেন, বহু মানুষ এই উদ্যোগটিকে সফল করতে টাকা পাঠিয়েছেন। মাত্র দেড় দিনে সব মিলিয়ে লক্ষাধিক টাকার চাঁদা উঠেছে। আর সে-টাকায় কেনা হয়েছে ২৫০ কেজি চাল, ১০০ কেজি ডাল, ২০০ কিলো আলু, ১৫০ প্যাকেট তেল। এছাড়া প্রত্যকের জন্য কেনা হয়েছে দুটো সাবান ও স্যানিটারি ন্যাপকিন।
নির্মাল্য জানিয়েছেন, শুধুমাত্র ওঁরাই নন, এগিয়ে এসেছেন আলুবিক্রেতা এমনকি গাড়ির ড্রাইভারও। আলুবিক্রেতা ওঁদের কাছে কেনা দামেই আলু বিক্রি করেছেন। গাড়ির ড্রাইভার যাতায়াত ভাড়ার জন্যে কোনো পয়সা নেননি, নেননি তেলের দামও। এভাবেই পাশে থাকতে চেয়েছেন তাঁরা, জানিয়েছেন নির্মাল্য।
এই প্রচেষ্টাকে আগামী দিনে আরও বড় করে দেখতে চাইছেন নির্ম্যাল্য ও তাঁদের টিম। দুর্বার সমিতি কাছে তাঁদের সমস্ত মাল পৌঁছে দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি তাঁরা। বরং যৌনকর্মীদের কাছে তা বিতরণও করে এসেছেন অর্জুন সেনগুপ্ত ও মলি রাজবংশী।
ছোটো-ছোটো সাহায্যও যে এমন বড়ো আকারে সফল করা যায়, তা ভাবতে পারেননি অনেকেই। কিন্তু এবার সেসব করার সময় এসেছে, তার প্রমাণ ওঁদের এই উদ্যোগ। আগামী দিনেও বিপদের সময় এভাবেই মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াবে এমনটাই বিশ্বাস বর্তমান প্রজন্মের। ওঁদের এই লড়াইকে কুর্নিশ।