নারীমুখ, দেবীর বিভ্রম

১.

পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন— ‘মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি...’

তাই তো দেখছি! অথচ খানিক আগেও বিমর্ষ মনে ভাবছিলাম, এবার ফিরতে হবে। এখান থেকে নিয়ে ফেরার মতো তেমন কোনো স্মৃতিই জমল না মনে। যেটুকু দেখলাম, তা ইতিমধ্যেই চর্চিত, লিখেছি নিজেও। নতুন কিছু যদি না-ই পেলাম, কেন তবে এতদূর আসা!

এসেছি নদিয়ার বিরহী গ্রামে। মদনপুর স্টেশনে নেমে, টোটো ধরে অকুস্থলে। পাশ দিয়েই বইছে প্রায়-মজে-যাওয়া যমুনা নদী। এই গ্রামেই ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণচন্দ্র রায় তৈরি করেছিলেন মদনগোপাল মন্দির। প্রতি বছর ভাইফোঁটার দিন স্থানীয় মহিলারা মদনগোপালকে ফোঁটা দেন। আর এই আচারকে কেন্দ্র করেই শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়েও বহাল ‘ভাইফোঁটার মেলা’। কিন্তু জানা তথ্য মিলিয়ে দেখতে এই হাজির-হওয়া যে নতুন কিছুই জানাবে না আর, আশা করিনি। 

ফিরে যাওয়ার আগে, দু-একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ। কথায়-কথায় জানা গেল, খানিক দূরেই দোলমঞ্চ। মদনগোপাল দোলের সময় পাড়ি দেন সেখানে। গিয়ে দেখি, ছিমছাম এক কাঠামো, ভেতরের দেওয়ালে রাধাকৃষ্ণের ছবি আঁকা। আর তার নিচেই দুদিন আগের পূজিতা কালীমূর্তি। বাহ, বেশ তো! কালী আর কৃষ্ণ এক হয়ে গেলেন এই দোলমঞ্চে! মনে পড়ল কেওড়াতলা শ্মশানে দেখা কৃষ্ণকালী মূর্তির কথাও। ‘কালীকৃষ্ণ গুহ’, পাশ থেকে বলে উঠলেন সৌভিকদা— সৌভিক সরকার। আরে, এভাবে তো ভাবিনি আগে! বিরহীর দোলমঞ্চের এই রাধা-কৃষ্ণের ছবি ও কালীমূর্তি আমাদের যেন নতুন করে চেনাল কবি কালীকৃষ্ণ গুহকেও।

দোলমঞ্চের দেওয়াল ও কালীমূর্তি

 

তারপর আবার ফেরার চিন্তা। থাকতে চেয়ে পাঁয়তারা কষা অথচ থাকার কোনো কারণ খুঁজে না-পাওয়া। তখনই এক চা-দোকানি জানালেন— ওই তো, ওই গলিটা দিয়ে একটু ভেতরে গেলেই একটা পুরনো চণ্ডীমন্দির আছে। দেখে আসেন গে।’

আর, সেই গলি ধরে হাঁটতে হাঁটতে, সামান্য বাঁক নিতেই মুচকি হেসে উঠলেন দেবতা। ‘কী, বলেছিলাম তো? পথ কিন্তু আমার শেষ হয়নি!’ 

নিজের মূর্খতা নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয় জাগল না মনে।

২.

রবীন্দ্রনাথ বলেছেন— ‘আমি তো অতকিছু বলতে পারব না! যেটুকু দেখেছি-শুনেছি ছেলেবেলা থেকে, সেটুকুই সম্বল। তবে সাতশো বছরের পুরনো। এ কি আজকের কথা!’

উঁহু, বলেছেন নয়, বলছেন। ইস্কুলের রচনা লেখার ধরন এখানে প্রয়োগ করলে ভুল হবে, কেন-না আমার সামনে যিনি দাঁড়িয়ে, তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নন। রবীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝবয়সি এই ব্যক্তির বাড়ির উঠোনে হাজির আমরা। পিছনে দাওয়ায় কলকল করছে তাঁর মা-বোন-স্ত্রীর কণ্ঠ। রবিবাবু উঠোনের একটা জায়গা দেখিয়ে বললেন— ‘এইখানেই হাড়িকাঠ পোঁতা ছিল একসময়। আমার বাবা অপ্রয়োজনীয় দেখে উপড়ে ফেলে দেন।’

চণ্ডীমন্দির

 

তাঁদের বাড়ির ঠিক সামনেই সেই চণ্ডীমন্দির। বয়স সাতশো বছর। বাঙালির মুখে-মুখে বলা এই সন-আন্দাজের ওপর আমার ভরসা নেই কোনোকালেই। কেন-না সাতশোটি পাঁচশোও হতে পারে, আবার আটশোও। তবে বেশি ভাবিনি। মন্দিরটির কাঠামো দেখে, এ যে অর্বাচীন কালের— এমন সন্দেহ জাগেনি মনে। অতি-সম্প্রতি রঙের প্রলেপ পড়েছে একাংশে, নতুন পিলার তুলে কৃত্রিম ছাদও গড়া হয়েছে, কিন্তু তারপরেও যেটুকু চেহারা দেখতে পাচ্ছি, তাতে সাতশো বছরের হওয়া অসম্ভব নয়।

রবীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে লেখক

 

বিরহীর মদনগোপাল মন্দির থেকে সামান্য দূরেই এই মন্দির। অখ্যাত ও আড়ালে থাকায়, স্থানীয় মানুষজনের বাইরের জগতে তেমন পরিচিতও নয়। কিন্তু পথের দেবতা যার সঙ্গে সাক্ষাতের ষড়যন্ত্র লেখেন, তাকে এড়ানোর সাধ্য কই! বর্তমানে বাইরের অনেককিছু ভেঙে গেলেও, গর্ভগৃহের ছাদে উঁকি দিয়ে বোঝা যায়, এককালে বেশ পাকাপোক্ত চালা ছিল। সেইসঙ্গে চারদিক-ঘেরা দাওয়া, মধ্যে-মধ্যে স্তম্ভের ধ্বংসাবশেষ। দেওয়ালের সরু-সরু পাঁজর বের-করা ইট সাক্ষ্য দিচ্ছে প্রাচীনত্বের। পিছনে যমুনা নদী, এই মন্দিরের মতোই ধ্বংসের অপেক্ষায়।  

প্রাচীন কাঠামোর অবশেষ

 

রবিবাবু বলে চলেছেন মন্দিরটির ইতিহাস। সে-প্রসঙ্গে খানিক পরে আসছি। বাড়ি ফিরে, এই নিবন্ধ লেখার আগে দুটি আকরগ্রন্থ ঘেঁটে দেখছিলাম, কোনো তথ্য পাই কিনা। থাকলে এখানেই থাকবে। নিরাশ হইনি, তবে খুবই সীমিত সে-তথ্য। অশোক মিত্রের ‘পশ্চিমবঙ্গের পূজা পার্বণ ও মেলা’ বলছে—

‘মদনগোপাল মন্দির প্রতিষ্ঠিত হইবার পূর্বে এই গ্রামে যমুনা নদীর তীরে একটি চণ্ডীমন্দির প্রতিষ্ঠিত ছিল। উক্ত চণ্ডীদেবী জনৈক দস্যুর আরাধ্যা দেবী। দস্যুর দুষ্কৃতি ধরা পড়িলে চণ্ডী মূর্তিকে যমুনার জলে নিক্ষেপ করা হয়। ঐ চণ্ডী মন্দির অদ্যপি আছে। শারদীয়া পূজার মধ্যে যে-কোন এক দিন স্থানীয় লোকেরা সমারোহের সহিত উক্ত মন্দিরে চণ্ডী দেবীর পূজা দেন। চণ্ডীদেবীর নামানুসারে বিরহী গ্রামের পশ্চিম ভাগের নাম চণ্ডীপাড়া হয়। বর্তমানে এই চণ্ডীপাড়া ভিন্ন মৌজা ভুক্ত হইয়াছে।’

অশোক মিত্রের বইয়ের এই বয়ান গত শতাব্দীর ষাটের দশকে। সত্তরের দশকে প্রকাশিত মোহিত রায়ের ‘নদীয়া জেলার পুরাকীর্তি’তে লেখা—

‘মদনগোপালের মন্দিরের সামান্য পশ্চিমে, ইটের তৈরি এক মঙ্গলচণ্ডী মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান। দেবীর এখন কোন মূর্তি নেই; একখণ্ড পাথর মঙ্গলচণ্ডীজ্ঞানে ও তাঁর ধ্যানে উপাসিত। শোনা যায়, সাবেক দেবীমূর্তি নাকি ছিল এক দস্যুর পূজিতা। দস্যু ধৃত হলে, সে-মূর্তি সামনের যমুনাগর্ভে নিক্ষিপ্ত হয়। শারদীয়া দুর্গাপূজার মধ্যের একদিন এ মন্দিরে আজও দেবী চণ্ডীর পূজা হয়ে থাকে। মন্দিরের কাঠের দুয়ার এখন প্রায় বিনষ্ট হলেও, একদা নকশা খোদাই-কাজে অলংকৃত ছিল বোঝা যায়। মঙ্গলচণ্ডীর নামানুসারে বিরহীর পশ্চিমাংশের নাম চণ্ডীপাড়া।’

প্রাচীন স্তম্ভের ভগ্নাবশেষ

 

অশোক মিত্রের বইয়ের বয়ানের সঙ্গে মোহিত রায়ের বিশেষ ফারাক নেই। তারপর কেটে গেছে প্রায় পঞ্চাশ বছর। রবিবাবুর কথায় ফিরি আবার। তিনি এই মন্দিরের বর্তমান সেবায়েত। দীর্ঘ বংশপরম্পরা নয় অবশ্য। এ তাঁদের মামার ভিটে। তাঁর বাবা বর্ধমান থেকে এখানে আসেন। পূজারী হিসেবে তিনি দ্বিতীয় প্রজন্ম। প্রশাসনিক কোনো সাহায্য নেই, নেই প্রতিবেশীদের সহযোগিতাও। বলতে গেলে, মন্দিরের যেটুকু যত্নআত্তি, তা রবিবাবুর পরিবারের ব্যক্তিগত উদ্যোগেই।

মন্দিরের দেওয়াল, ইটের পাঁজর

 

যাকগে সেসব। প্রসঙ্গে ফিরি। রবিবাবুর বলা ইতিহাসের সঙ্গে গ্রন্থিত ইতিহাস অনেকটাই আলাদা। তাঁর মুখে জানলাম, সাতশো বছর আগে এই মন্দিরের চণ্ডী ছিলেন ডাকাতদের পূজিতা। ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে, ডাকাতরা শিশুদের ধরে এনে, মন্দিরের সামনের হাড়িকাঠে নরবলি দিত। খোদ দেবীই নাকি রুষ্ট ছিলেন, অথচ প্রতিকার করতে পারছিলেন না কিছুতেই। একদিন এক কিশোরীকে ধরে আনে ডাকাতরা। বলির পূর্বমুহূর্তে, দেবীকে স্মরণ করে প্রাণভিক্ষা চায় সেই কিশোরী। দেবী তাকে বলেন, কোনো ছল করে যদি মন্দিরের পিছন দিকে চলে আসতে পারে মেয়েটি, প্রাণসংশয় হবে না আর। বাহ্যকর্মের অজুহাত দেখিয়ে, মন্দিরের আড়ালে যায় সেই কিশোরী। তারপর, অনেকক্ষণ ফিরতে না-ফেরায়, ডাকাতরা মন্দিরের পিছনে গিয়ে দেখে, কিশোরীটি অদৃশ্য। সব রাগ গিয়ে পড়ে দেবীর ওপর। ক্রোধে অন্ধ হয়ে, দেবীমূর্তি টুকরো-টুকরো করে যমুনার জলে ভাসিয়ে দেয় ডাকাতরা। সেই থেকে এই চণ্ডীমন্দির মূর্তিশূন্য।

বিশ্বাস বা অবিশ্বাস যা-ই করি না কেন, স্থানীয় ইতিহাসে ক্ষেত্রে লোককথাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না কোনোমতেই। অতএব রবিবাবুর কথার প্রেক্ষিতেই জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে এখন ভিতরে যা রয়েছে, সেসব এল কোথা থেকে?

রয়েছে অবশ্য বিশেষ কিছু নয়। চারটি প্রস্তরখণ্ড; মধ্যেরটি বড়ো এবং সিঁদুররঞ্জিত। লাল একটা বেদির ওপর সাজানো। রবিবাবু জানালেন, তাঁর ‘বড়োমামা’কে একদিন দেবী স্বপ্নাদেশ দেন, যমুনায় নেমে তাঁর যা অবশেষ পাওয়া যায়, তুলে এনে যেন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ‘বড়োমামা’ যমুনা থেকে এই প্রস্তরখণ্ডগুলি উদ্ধার করেন ও দেবীজ্ঞানে পূজার সেই শুরু। তাও প্রায় শ-খানেক বছর তো হলই! ‘তাহলে এই পাথরই একমাত্র?’ ‘দেবীই পাথর হয়ে গেছেন’— রবিবাবুর বয়ান।

চণ্ডীজ্ঞানে পূজিত প্রস্তরখণ্ড

 

এসব ক্ষেত্রে তর্ক করতে নেই। নিজের মতো পরিস্থিতি বুঝে চুপ করে থাকাই নিয়ম। আদৌ কি ডাকাতরাই দেবীমূর্তি ধ্বংস করেছিল, না অন্য-কোনো সংঘর্ষের ইতিহাস এর জন্য দায়ী? গর্ভগৃহে রয়েছে একটি শিবলিঙ্গও, যা নাকি সেই ডাকাতদের আমলেরই। সাম্প্রতিক-অতীতে উদ্ধার করা পাথরগুলিকে পূজা করার কাহিনি যতই অপ্রাসঙ্গিক লাগুক শুনতে, মন্দিরকাঠামোর প্রাচীনত্ব নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই এখনো। 

চমকে উঠলাম গর্ভগৃহে প্রবেশের দরজার ফ্রেম দেখে। এ-ফ্রেম সেই সাতশো বছরের আগেকার, নিশ্চিত। ঠিক মধ্যিখানে, প্রবেশের মুখে খোদাই-করা এক নারীর মুখাবয়ব। সিঁদুরে ও সময়ের ক্ষয়ে মলিন হয়ে এসেছে। তারপরও কেমন যেন রহস্য জাগায়। কাঠের ফ্রেমে এ-মুখ এল কী করে? কারই-বা!

খুঁটিয়ে দেখতে-দেখতে যখন সাতপাঁচ ভাবছি, রবিবাবুর কথায় চমক ভাঙল। ‘ডাকাতরা ক্রুদ্ধ হয়ে চণ্ডীমূর্তিকে যমুনায় নিক্ষেপ করার আগে, দরজার মাথায়, এই এখানে— খোদাই করে রেখেছিল দেবীর মুখ। সেই থেকেই...’

নারীমুখ, দেবীর বিভ্রম

 

দেবতা, হে পথনির্দেশক, এ কী অপূর্ব কাহিনির সামনে এনে দাঁড় করালেন আমায়! পূর্বজদের লেখায় তো এর উল্লেখ পাইনি! মন্দিরের দরজার কপাটে-ফ্রেমে দেবদেবীর মূর্তি ও অন্যান্য অলংকরণ খোদাই করার নজির আছে অন্যান্য মন্দিরেও, কিন্তু এখানে তো শুধুমাত্র একটি মুখ, তাও আবার কণ্ঠহীন, শুধু ধড়— এ কোনো পরিশীলিত শিল্পীর কাজ বলে মনে হচ্ছেও না! নেহাতই কাঁচা হাতে ফুটিয়ে তোলা যেন! তাহলে কি রবিবাবুর কথাই সত্যি? ডাকাতরাই চণ্ডীর মুখ খোদাই করে রেখেছিল এখানে? নাকি মূর্তি-ধ্বংসের পর, স্থানীয়রাই স্মৃতি হিসেবে খোদাই করে রাখে সে-মুখ? 

প্রশ্ন জাগে, আদৌ কি চণ্ডী, না কালী? কেন-না, ঠোঁটের ওপরের ভাঁজ স্পষ্ট হলেও, নিচের অংশ দেখে মনে হয়, জিভ বের করে আছে যেন কেউ। অবশ্য শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ক্ষয় পেতে-পেতেও এ-রূপ নিতে পারে। আর, যদি কালীর প্রসারিতজিহ্বা মুখই হয়, তাহলে সাতশো বছর হওয়া অসম্ভব৷ ষোড়শ শতকে কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ এ-রূপের প্রচলন ঘটান বাংলায়। সেক্ষেত্রে পাঁচশো বছরের বেশি না-হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি৷ 

এসব কূটচিন্তা থেকে মন সরাই। যে দেবী বহু শতাব্দী পূর্বেই বিসর্জিতা, তিনি দরজায় খোদিত সামান্য মুখাবয়বে এখনো বিরাজমানা— এ-বিস্ময়ের কাছে ম্লান হয়ে আসে সব।

৩.

পঞ্চাশ বছর আগেও দেবীর নামানুসারে যে-এলাকার নাম ছিল ‘চণ্ডীপাড়া’, তা এখন ‘চণ্ডীরামপুর’ নামে পৃথক গ্রাম। হিন্দু-মুসলমানের মিলিত বসবাস। ফেরার পথে, পুকুর ও ধানখেতের মাঝখানে পোঁতা একটা সাইনবোর্ড চোখে পড়ল— ‘চণ্ডীরামপুর পবিত্র কবরস্থান’। না, চণ্ডী ও রাম যে নামের সঙ্গে জড়িয়ে, সেখানে গোরস্থানও রয়েছে— এ-নিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা ফাঁদব না এবার। গ্রামবাংলায় এ-জিনিস এতই স্বাভাবিক যে, আমাদের শহুরে চোখ আলাদা করে দেখতে চাইলে, বিভেদকেই প্রশ্রয় দেওয়া হয় পরোক্ষে। 

আমি ভাবছি ফেলে-আসা সেই মন্দিরের কথা। সাতশো বছর যদি না-ও হয়, পাঁচশোর কম হবে না, নিশ্চিত। কয়েক শতাব্দী পরে পরিত্যক্ত চণ্ডীমন্দিরের ঢিল-ছোঁড়া দূরত্বেই গড়ে উঠবে মদনগোপাল মন্দির। পাশ দিয়ে বয়ে যাবে স্রোতস্বিনী যমুনা। সেই যমুনাও শুকিয়ে যাবে কালে-কালে। চণ্ডীমন্দিরে প্রদীপ জ্বলবে আবার। কুড়িয়ে-আনা পাথর নিকিয়ে বছরের পর বছর ভক্তিভরে পূজা করে যাবে একটি পরিবার। আর, গর্ভগৃহে প্রবেশের পথে, আদিকাল থেকে ফুটে থাকবে নারীমুখ, দেবীর বিভ্রম।

-    দেবতা, আজকের পথ কি তবে ফুরোল?
-    তা কেন! অবসর যখন পেয়েইছ, ফেরার পথে একবার ঢুঁ মারবে না?
-    বলছেন? যাব?
-    তোমারও কি ইচ্ছে নেই মনে-মনে!

অতএব ভিন্ন নদী, ভিন্ন জনপদ। সারাদিনের কাজ গুটিয়ে, সূর্য ডুবছে ধীরে ধীরে। আমি দেখছি, মাথায় কালীমূর্তি নিয়ে ধীরে ধীরে গঙ্গায় নেমে যাচ্ছেন রামপ্রসাদ সেন। সন্ধে হয়ে এল বলে...

ছবি - সৌভিক সরকার, তন্ময় ভট্টাচার্য

Powered by Froala Editor