প্রায় এক দশক আগে এক রহস্যময় বেতার সংকেত পেয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছিল বিজ্ঞানীদের মধ্যে। কয়েক মিলি সেকেন্ডের একটি সংকেত, তারপর কিছুক্ষণ নীরবতা এবং আবার একই সংকেত। কোথায় সেই সংকেতের উৎস বা কীভাবে তৈরি হল এই সংকেত, কিছুই জানা যায়নি তখন। অনেকেই দাবি করেছিলেন, ভিন গ্রহের প্রাণীরা কোনো বার্তা পাঠাচ্ছে পৃথিবীতে। তবে সেই রহস্যময় সংকেত আর পাওয়া যায়নি। তারপর এক দশক পেরিয়ে এসে আবার অ্যাজাইল স্যাটেলাইটের রাডারে ধরা পড়ল একই সংকেত। পাঁচ মিলি সেকেন্ডের একটি সংকেত, তারপর ৩০ মিলি সেকেন্ডের নীরবতা এবং আবার সেই পুনরাবৃত্তি। তারপর আর কোনো সাড়া নেই।
গত মঙ্গলবার এই সংকেত পেয়ে আবারও নড়েচড়ে বসেছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। তবে এবার আর এই সংকেতের উৎসও অজানা নয়। আমাদের ছায়াপথ মিল্কি ওয়ে থেকেই ভেসে এসেছে এই সংকেত। পৃথিবী থেকে উৎসের দূরত্ব প্রায় ৩০ হাজার আলোকবর্ষ। সেখানেই আছে একটি নিউট্রন স্টার বা যুগ্মনক্ষত্র এসজিআর ১৯৩৫+২১৫৪। উপগ্রহ প্রেরিত তথ্য অনুযায়ী, এই নক্ষত্রের মধ্যেই ঘটেছে কোনো বিস্ফোরণ। আর তার ফলেই তৈরি হয়েছে এই ফাস্ট রেডিও ব্রাস্ট। এমনকি এই বেতার সংকেতের সঙ্গে সঙ্গেই পাওয়া গিয়েছে এক্স রে বিচ্চুরণের সংকেতও। আর তাই বিজ্ঞানীদের অনুমান এই বিস্ফোরণের ফলে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়েছে।
তবে এখনও বেশ কিছু রহস্য থেকে গিয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। নতুন ধরনের এই বেতার সংকেতকে ঘিরে বিজ্ঞানীদের প্রশ্ন অনেক। শুধুই কি কোনো শক্তিশালী বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্টি হয় এই তরঙ্গ, নাকি তার অন্য উৎসও থাকতে পারে? আর কেনই বা পরপর দুবার সংকেত পাওয়া যায়? উপগ্রহ প্রেরিত তথ্য নিয়ে তাই আলোচনা চলছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। তবে এই সামান্য তথ্য থেকে হয়তো এর থেকে বেশি কিছু জানা সম্ভব হবে না। তাই অপেক্ষা করে থাকতে হবে আরও একটি সংকেতের।
তবে এই সংকেত যে এলিয়েনদের পাঠানো সংকেত নয়, এবং মহাজাগতিক ঘটনার মধ্যেই আছে এর রহস্য; একথা প্রমাণ করতে পেরে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত বিজ্ঞানীরা। কল্পনাবিলাসী মানুষের কাছে তাঁরা হয়তো আবারও প্রমাণ করে দিলেন, এলিয়েন বলে কিছুর অস্তিত্ব নেই।