আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগের কথা। বর্তমান কায়রোর নিকটবর্তী গিজায় গড়ে উঠেছিল তিনটি প্রকাণ্ড পিরামিড। যার মধ্যে সবচেয়ে বড়ো পিরামিড তথা ফ্যারাও খুফুর পিরামিডটি পরিচিত ‘গ্রেট পিরামিড অফ গিজা’ (Great Pyramid Of Giza) নামে। ৪৫৫ ফুট উঁচু পিরামিডটি নির্মাণে সবমিলিয়ে ব্যবহৃত হয়েছিল প্রায় ৫৭ লক্ষ টন পাথর। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ পাথর কীভাবে সেখানে নিয়ে এসেছিলেন প্রাচীন মিশরীয় প্রকৌশলীরা?
অষ্টাদশ শতক থেকেই এই ধাঁধাঁর অনুসন্ধান করে চলেছে মানুষ। সাধারণত, পিরামিড তৈরির কাজে প্রাচীন মিশরীয়রা ব্যবহার করতেন নীল নদকে। জলপথেই তাঁরা পরিবহন করতেন চুনাপাথর ও গ্রানাইটের মতো সামগ্রী। বিশেষত নীল নদে বন্যা দেখা দিলে, সেই জলোচ্ছ্বাসকে হাইড্রোলিক লিফটের মতো করে ব্যবহার করতেন তাঁরা। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, গিজার তিনটি পিরামিডের নিকটে নদী নেই কোনো।
এই রহস্যের সমাধান করতেই অনুসন্ধানে নেমেছিলেন ফ্রান্সের আয়াক্স-মার্সেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। প্রাথমিকভাবে তাঁরা ভেবেছিলেন, এই অঞ্চলে কৃত্রিম খাল কিংবা জলপথ তৈরি করেছিলেন প্রাচীন মিশরীয়রা। তবে পিরামিডের নিকটবর্তী অঞ্চলের মাটি পরীক্ষার পর বদলে যায় সেই ধারণা। মাটির তলা থেকে পাওয়া যায় পাললিক শিলা এবং দানাশস্যের জীবাশ্ম। এই ঘটনাই প্রমাণ করে দেয়, কোনো কৃত্রিম খাল নয়, গিজার পিরামিডের কাছ দিয়েই একটা সময় প্রবাহিত হত আস্ত একটি নদী। যা নীল নদেরই একটি শাখানদী। কিন্তু কোথায় হারিয়ে গেল এই নদী?
খ্রিস্ট-পূর্ব ২৭০০ থেকে ২৫০০ অব্দের মধ্যে গড়ে উঠেছিল গিজার তিনটি পিরামিড। সে-সময় এই নদীর অস্তিত্ব থাকলেও, পরবর্তীতে ধীরে ধীরে জলতল কমতে থাকে তার। ৩৩২ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে যখন আলেকজান্ডার মিশর-জয় করেন, তখন এই নদী প্রায় শুকিয়ে যায়। পাললিক শিলার বয়স জানান দিচ্ছে তেমনটাই। পাশাপাশি কায়রোর দক্ষিণে ৯ মাইল দূরত্বে বর্তমানে প্রবাহিত হয় আরও একটি নদী। যা পরিচিত খুফু-ধারা নামে। গিজার পাশ দিয়ে বয়ে চলা সেই প্রাচীন নদীই সময়ের সঙ্গে দিক পরিবর্তন করে কায়রোর দক্ষিণে এসে হাজির হয়েছে, সেই সম্ভাবনাও রয়েছে বৈকি। সবমিলিয়ে ‘প্রসিডিংস অফ ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স’-এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক এই গবেষণা প্রমাণ করল, কোনো অলৌকিক ক্ষমতা নয়, প্রকৃতির সাহায্যেই গিজার প্রকাণ্ড পিরামিডগুলি গড়ে তুলেছিলেন প্রাচীন মিশরীয়রা।
আরও পড়ুন
মিশর নয়, পৃথিবীর প্রাচীনতম মমিদের বাসস্থান চিলি
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আজও জীবিত-জ্ঞানে প্রাচীন মিশরীয় দেবতাদের পুজো করেন কেমেটবাদীরা