“বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম অবহেলিত রোগের মধ্যে সর্পদংশনে মৃত্যু সবার উপরে। আর আমাদের দেশে সমস্যাটা আরও বেশি খানিকটা গভীরে। গ্রামবাংলায় সাপেকাটা রোগীকে হাসপাতালের পরিবর্তে কেউ কেউ রোগীকে ওঝা বা গুনিন এর কাছে নিয়ে যান। এর ফলে সাপে বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক একটা ঘটনা হয়ে উঠেছে।” বলছিলেন বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সংস্থা সোসাইটি ফর হেরিটেজ অ্যান্ড ইকোলজিক্যাল রিসার্চেস বা শের-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক জয়দীপ কুণ্ডু। এই সংস্থার উদ্যোগেই গত সপ্তাহে বিশ্ব সর্প দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছিল এক অভিনব কর্মসূচির।
পরিবেশে সাপের প্রয়োজনীয়তা এবং সর্প সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি হুগলি জেলার হরিপাল ব্লকের ১০০ কৃষকবন্ধুকে সর্পদংশন প্রতিরোধ করতে একজোড়া গামবুট ও একজোড়া গ্লাভস্ দেওয়া হয় শের’এর পক্ষ থেকে। জয়দীপবাবু বলছিলেন, “সাপ সংরক্ষণের যেমন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তেমনই সাপের আক্রমণ থেকে মানুষকে বাঁচানোরও প্রয়োজন রয়েছে। আর সেই উদ্দেশ্যের কথা মাথায় রেখেই এই পরিকল্পনা নিয়েছেন শের-এর সদস্য কল্যাণময় দাস।” এক দশকের বেশি সময় ধরে শের বাংলার বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ এবং মানুষ-প্রকৃতি সংঘাত মেটানোর কাজ করে আসছে। তবে সর্প-দংশনের বিরুদ্ধে শের-এর উদ্যোগ এই প্রথম।
জয়দীপবাবু বলছিলেন, “বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধান থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান বলছে, সাপের সঙ্গে মানুষ সংঘাতের ৯৫% ঘটে গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে দরিদ্র পরিবারের সংখ্যাই সবথেকে বেশি এবং এক্ষেত্রে সাপ ও মানুষ উভয়েরই ক্ষতি হয়।” আর এই সংঘাত মূলত দেখা যায় বর্ষাকালেই। এই সময় সাপের গর্তে বৃষ্টির জল ঢুকে যাওয়ার ফলে তারা বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়। আর কৃষিকাজের সময় অসাবধানে সাপের গায়ে পা লেগে গেলে বা তারা কোনোভাবে বিরক্ত হলেই আঘাত করে। নানা নির্বিষ সাপের পাশাপাশি বাংলায় চন্দ্রবোড়া, কেউটে, গোখরোর মতো ভয়ানক বিষধর সাপের সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়। এই সমস্ত বিষয় মাথায় রেখেই কল্যাণময়বাবুর এই উদ্যোগ। পাশাপাশি সাপ সংরক্ষণের জন্য তো প্রচার কর্মসূচি চলছেই। আগামীদিনে এভাবেই মানুষ এবং সাপের সংঘাত কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী জয়দীপবাবু এবং শের-এর সকল সদস্য।
আরও পড়ুন
বন্যপ্রাণ বাঁচাতে শহরের পথে ট্যাবলো
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বন্যপ্রাণীদের রাস্তা পারাপারের জন্য তৈরি হচ্ছে ওভারপাস, ভারতে প্রথম