যে কোনো পদার্থেরই পরমাণু তৈরি হয় প্রোটন, নিউট্রন, ইলেকট্রন দিয়ে। তা সকলেই জানি আমরা। কিন্তু এই তিনটি কণা ছাড়াও প্রকৃতিতে রয়েছে বহু বহু মৌলিক কণা। এমনকি প্রোটন, নিউট্রন প্রভৃতি কণা আসলে মৌলিক নয়। এরা গঠিত হয়েছে আরও সূক্ষ্ম কণা দিয়ে। পদার্থবিদ্যার কণাতত্ত্বের এই রহস্য সম্পূর্ণরূপে আজও অধরা বিজ্ঞানীদের কাছে। এবার এমনই এক অজানা কণার হদিশ দিল কণা-পদার্থবিদ্যার পীঠস্থান ‘সার্ন’।
সার্নের প্রায় ৮০০ জন বিজ্ঞানী যুক্ত ছিলেন এই গবেষণার কাজে। ‘লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার’-এ উচ্চশক্তির দুটি প্রোটনের সংঘর্ষে তৈরি হল এই নতুন কণা। প্রাথমিকভাবে যার নাম ঠিক করা হয়েছে X(6900)। এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট যেমন জটিল, তেমনই অনন্য। তবে ক্ষণস্থায়ী এই কণা দ্রুত ক্ষয় হয়ে বিভাজিত হয়ে যায় দুটি বিশেষ মেসন কণায়।
এই যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৬৪ সালে। কণাতত্ত্বের জগতে বিপ্লব এসেছিল বলা চলে। বিগ ব্যাংয়ের তত্ত্বকে সামনে এনেছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেখান থেকেই সম্ভাবনা পাওয়া গিয়েছিল হাজারো নতুন কণার। সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত গবেষক প্রফেসর গেলম্যান সমাধান করেন, প্রোটন-নিউট্রন তৈরি হয়েছে ক্ষুদ্রতর কণা দিয়ে। যার তিনি নামকরণ করেন কোয়ার্ক।
প্রকৃতিতে রয়েছে ছ’ধরনের কোয়ার্ক। পদার্থবিদরা প্রমাণ করেছেন, সাধারণত নিউক্লিয়নের মত ভারী ‘ব্যরিয়ন’ কণারা তৈরি হয় তিনটি কোয়ার্ক দিয়ে। ‘মেসন’ তৈরি হয় একটি করে কোয়ার্ক এবং অ্যান্টি-কোয়ার্ক দিয়ে। তবে এছাড়াও গেলম্যান তত্ত্ব দিয়েছিলেন, দুটি করে কোয়ার্ক ও দুটি অ্যান্টি-কোয়ার্কের সংমিশ্রণে ‘টেট্রাকোয়ার্ক’ এবং চারটি কোয়ার্ক ও একটি অ্যান্টি-কোয়ার্কের সংমিশ্রণে তৈরি হতে পারে ‘পেন্টাকোয়ার্ক’।
আরও পড়ুন
এই ছায়াপথেই রয়েছে ব্রহ্মাণ্ডের প্রাচীনতম নক্ষত্র, আবিষ্কারে অবাক বিজ্ঞানীরাও
পরবর্তীকালে সেই সম্ভাবনাই সত্যি হয়েছিল। ২০০৩ ও ২০১৫ সালে পাওয়া গিয়েছিল এই ধরণের কণা। সম্প্রতি সার্নের আবিষ্কৃত এক্স(৬৯০০)-ও একটি টেট্রাকোয়ার্ক। যা তৈরি চারটি চার্ম কোয়ার্ক দিয়ে। এক্স(৬৯০০)-এর আবিষ্কার এবার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল পদার্থবিদ্যার। যা কণাতত্ত্বের গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ইতিমধ্যেই নতুন এই টেট্রাকোয়ার্কের চরিত্রের বিশ্লেষণ করা শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা আশাবাদী, পরবর্তীকালে এই আবিষ্কারের ওপর ভর করে এগিয়ে যাবে মাইক্রো-কসমোসের গবেষণাও...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দূরত্ব মাত্র ১০০০ আলোকবর্ষ, পৃথিবীর নিকটতম ব্ল্যাক হোলের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা