ক্যাপ্টেন আমেরিকাকে সবার মনে আছে নিশ্চয়ই? শত্রুদের সঙ্গে লড়তে গিয়ে বরফের নিচে চাপা পড়ে গিয়েছিল এই সুপারহিরো চরিত্রটি। বহু বছর পর তাঁকে খুঁজে বের করা হয় সেখান থেকে। তাজ্জব ব্যাপার, তখনও বেঁচে সে! ব্যস, তারপর থেকেই ক্যাপ্টেন আমেরিকার নতুন পর্যায়ের জীবন, নতুন যুদ্ধ। মারভেল-ভক্তরা তো ওয়াকিবহাল এই কাহিনি সম্পর্কে। সেটাই যদি বাস্তব হয়ে সামনে আসে, তখন কী করবেন? না, ক্যাপ্টেন আমেরিকা ফিরে আসেননি। কিন্তু জিন হেরার্ল্ডের কাহিনি শুনলে এরকমই মনে হবে আপনার। তিনিও যে বরফের নিচ থেকে জীবন্ত বেরিয়ে এসেছিলেন!
১৯৮০ সালের ডিসেম্বর মাস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেশোটায় অসম্ভব ঠান্ডা পড়েছে। প্রায় -২২ ডিগ্রি ফারেনহাইট। রাস্তায় চলাই দায়। তার মধ্যেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছেন বছর উনিশের তরুণী জিন হেরার্ল্ড। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি পৌঁছতে হবে। সাবধানে থেকেও যতটা দ্রুত চালানো যায় সেইমতো চলছে গাড়ি। হঠাৎই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। বরফের ওপর গাড়ির চাকা পিছলে যায়, তারপর সোজা গিয়ে একটি খালে গিয়ে পড়ে। জিনের কিছু হয়নি, কিন্তু একেবারে অসহায় পরিস্থিতির মধ্যে পড়লেন। কীভাবে বাড়ি যাবেন এবার? এমন আবহাওয়ায় তো মরেই যাবেন!
মাথায় এল, কাছেই এক বন্ধুর বাড়ি। কোনোরকমে যদি সেখানে যাওয়া যায়… সেই চেষ্টাই করতে লাগলেন জিন। কিন্তু এমন ঠান্ডায় হাঁটাও যে দায়! শরীর যেন জমে যাচ্ছে একদম। সঙ্গে আবার জোরালো হাওয়া বইছে। আস্তে আস্তে পায়ে জোর কমতে লাগল জিন হেরার্ল্ডের। তাও কোনোরকমে যতটা যাওয়া যায়, তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু কিছুই হল না। বরফের ওপর মুখ থুবড়ে পড়লেন জিন। তখন, আন্দাজ রাত একটা…
প্রায় ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ওইভাবে বরফের ওপর পড়েছিলেন তিনি। সকালে ওই বন্ধুটি ঘরের বাইরে এসে দেখে, বাইরেই পড়ে রয়েছে জিন। কিন্তু শরীরে একফোঁটাও প্রাণের স্পন্দন নেই। গোটা শরীর সাদা, যেন বরফের পুতুল! চোখ দুটো অদ্ভুত প্রাণহীন; দেখেই ভয় লাগে। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল তাঁকে। ডাক্তাররাও ঘাবড়ে গেলেন। কীভাবে বাঁচাবেন জিনকে? কিছুই যে বোঝা যাচ্ছে না! হার্টবিট মিনিটে আটটা, প্রায় নেই বললেই চলে। সমস্ত আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন ডাক্তাররা। একটু গরমে রেখে দিয়েছিলেন জিনের প্রাণহীন দেহটিকে…
এরপরই ঘটে আসল মিরাকল! মোটামুটি দুপুর একটা নাগাদ একটা ক্ষীণ শব্দ আসতে থাকে জিনের দেহ থেকে। চিকিৎসকরা অবাক হয়ে দেখেন, আস্তে আস্তে প্রাণ ফিরছে ওই দেহে। একটু জল খাওয়ার জন্য প্রার্থনা তাঁর। আস্তে আস্তে জীবন ফিরে পেল জিন হেরার্ল্ড। ৪৯ দিনের মাথায় ছাড়া পেলেন হাসপাতাল থেকে। একদম ঠিকঠাক, ফিট তিনি। কোনো বড়ো অসুবিধা কিচ্ছু নেই। কিন্তু এভাবে হঠাৎ করে কী হল, সেটাই বুঝতে পারছেন না ডাক্তাররা। নিখাদ ক্যাপ্টেন আমেরিকাই বলা যায়, না কি!