“নবারুণ ভট্টাচার্যকে খুব ছোট থেকে জেনেছি বা পড়েছি, এমনটা একেবারেই নয়। কবিতা পড়ার অভ্যেস ছোটো থেকেই ছিল। কিন্তু নবারুণকে পড়তে শুরু করলাম কলেজ জীবনের শুরুতে। প্রথম পড়া কবিতা ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’। পড়ার পরে মনটা কেমন গরম হয়ে গিয়েছিল। এভাবেও প্রতিবাদের কথা বলা যায়! একই অনুভূতি হয়েছিল ‘লুব্ধক’ পড়ার সময়।” বলছিলেন শুভাশীষ ভট্টাচার্য্য। আর কিছুদিনের মধ্যেই মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর তৈরি তথ্যচিত্র ‘আড়বালিয়া আর নবারুণ’।
আড়বালিয়া, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে উত্তর ২৪ পরগনার এক ছোট্ট গ্রাম। এই গ্রামের বুকেই কেটেছে বিজন ভট্টাচার্যের ছেলেবেলা। তাঁর বাবা ক্ষিরোদবিহারী ভট্টাচার্য ছিলেন এই গ্রামেরই স্কুলশিক্ষক। নবারুণ নিজেও বারবার ছুটে গিয়েছেন সেখানে। আর এই আড়বালিয়া গ্রামেই জন্ম অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুর। বিশ্বনাথের কথায়, “নবারুণ ভট্টাচার্য আমার গেঞ্জির মাপ বড়ো হওয়ার এক অন্যতম কারণ। আর আমার কাছে আমার গ্রাম, আমার গ্রামের বাড়ি আজও এক বিরাট জায়গা জুড়ে রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম কারণ নবারুণদা। পরে ওঁর কাহিনি অবলম্বনে ‘হারবার্ট’ সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে তো আবার যোগাযোগ হয়েছেই। কিন্তু শুরুটা তো সেই গ্রাম থেকেই।” দীর্ঘদিন বিশ্বনাথ বসুর সেক্রেটারি হিসাবে কাজ করেছেন শুভাশীষ। তবে মনের মধ্যে সবসময়ই ইচ্ছা ছিল, নবারুণ ভট্টাচার্যকে নিয়ে জীবনে একটা কিছু করবেন। “তাঁকে তো আমরা কবিতা, গল্প আর উপন্যাসের বাইরে খুব বেশি পাই না। তাঁর জীবন সম্বন্ধে জানার অবকাশ খুব কমই আছে। পরিচালক কিউ-র একটি তথ্যচিত্র বাদ দিয়ে এরকম প্রচেষ্টা আর কিছুই হয়নি”, বলছিলেন শুভাশীষ। তিনি তাই নবারুণকে ছুঁতে চেয়েছিলেন একটু অন্যভাবে।
“এর মধ্যে গত মে মাস নাগাদ বিশ্বনাথদার সঙ্গে কথা বলতে বলতে হঠাৎ নবারুণ ভট্টাচার্যের প্রসঙ্গ এসে পড়ে। উনি ওঁর স্মৃতির কথা বলছিলেন। আর তখনই এই ছবির পরিকল্পনা করে ফেলি।” জানান শুভাশীষ। যেমন ভাবনা, তেমনই শুরু হয়ে গেল কাজ। পরদিনই শুটিং-এর যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে গন্তব্য আড়বালিয়া। অথচ হাতে কোনো স্ক্রিপ্ট নেই। নেই প্রথাগতভাবে একটা সিনেমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কোনোকিছুই। সবটাই এগিয়েছে শুটিং-এর সঙ্গে সঙ্গে। অন্যদিকে বিশ্বনাথের কথায়, “আমার মনের মধ্যে থাকা একটা অনুভূতি যে শুভাশীষকে এতটা নাড়া দেবে, আর সেই ছোট্ট সেঁউতিটা নিয়ে একেবারে সমুদ্র পাড়ি দেবে – এটা ভাবতে পারিনি। আমার গ্রামকে মানুষ দেখবে এক অন্য গল্পের মধ্যে দিয়ে, এর থেকে বড়ো প্রাপ্তি আর কিছুই হতে পারে না।”
আরও পড়ুন
কানে গোল্ডেন আই-জয়ী তথ্যচিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে কলকাতার তিন তরুণ-তুর্কি
আরও পড়ুন
ছাত্রাবস্থায় নির্বাসিত এফটিআইআই থেকে, কানে শ্রেষ্ঠ তথ্যচিত্র নির্মাতা পায়েল
আরও পড়ুন
ছকভাঙা তথ্যচিত্রে মহারাষ্ট্রের লোককথা, আন্তর্জাতিক সম্মাননা বাঙালি পরিচালকের
অন্যদিকে শুভাশিসের কথায়, বিশ্বনাথের মতোই আড়বালিয়া গ্রামে রয়েছেন আরও একজন, যাঁর জীবনের সঙ্গে নবারুণ জড়িয়ে গিয়েছেন। তাঁর নাম শুভঙ্কর দাস। এমনই আরও অনেক মানুষের চোখ দিয়ে, বলা ভালো আড়বালিয়া গ্রামের ভিতর দিয়ে নবারুণকে একটু একটু করে চেনা। আপাতত ছবির এডিটিং-এর কাজ শেষ। ৩০ মিনিটের এই তথ্যচিত্রটি প্রথমে ফেস্টিভ্যাল সার্কিট-এ ঘোরানোর ইচ্ছা আছে শুভাশীষের। তারপর তা প্রিমিয়ারের ব্যবস্থা করা হবে। কবিতা, গল্প আর উপন্যাসের পাতা থেকে বেরিয়ে অন্য এক নবারুণকে হয়তো ছুঁতে পারবেন এই তথ্যচিত্রের দর্শকরা। আর এই অনুসন্ধানের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিশ্বনাথ, শুভাশীষ এবং ব্ল্যাক মিরর ফিল্মসের সমস্ত সদস্যের সাফল্য তো সেখানেই।
Powered by Froala Editor