ভারতেই রয়েছে পৃথিবীর প্রাচীনতম সাইক্লোট্রন, বিজ্ঞানের ইতিহাস ঘেঁটে তৈরি হল তথ্যচিত্র

১৯৬৭ সাল। পেরিয়ে গেছে স্বাধীনতার বিশ বছর। বিজ্ঞানের বিভিন্নক্ষেত্রের গবেষণার পরিকাঠামো একটু একটু করে গড়ে উঠছে ভারতে। ঠিক সেই সময়ই যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিল পারমাণবিক পদার্থবিদ্যার অন্যতম একটি পরীক্ষামূলক যন্ত্র। কণা ত্বরক বা পার্টিকল অ্যাক্সিলারেটর। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত এই যন্ত্রটিই শুধু ভারতের নয়, বরং পৃথিবীর প্রথম কণা ত্বরক। ভারতে আসার ৫০ বছর পরেও আজ এই যন্ত্র কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সফলভাবে। এবার বিজ্ঞান ঐতিহাসিক জাহ্নবী ফালকের পরিচালনায় তথ্যচিত্র তৈরি হল এই ঐতিহাসিক যন্ত্রটিকে নিয়েই।

আমেরিকার বিখ্যাত পারমাণবিক পদার্থবিদ আর্নেস্ট লরেন্স প্রথমবারের জন্য ১৯২৮ সালে পৃথিবীর সামনে এনেছিলেন এক নতুন তত্ত্ব। তড়িৎ কণাকে যে তড়িৎ ক্ষেত্র এবং চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা ত্বরান্বিত করা সম্ভব, তা-ই তত্ত্ব দিয়ে দেখালেন তিনি। বছর দুয়েকের মধ্যেই নকশাও বানালেন এই যন্ত্রের। ১৯৩০ সালে বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হল পৃথিবীর প্রথম সাইক্লোট্রন। ১৯৩২ সাল থেকে কাজও শুরু করল সেই যন্ত্র। খুলে গেল পারমাণবিক পদার্থবিদ্যার একটা দিগন্ত। ১৯৩৮ সালে পদার্থবিদ্যায় এই যুগান্তকারী অবদানের জন্য আর্নেস্ট লরেন্স সম্মানিত হয়েছিলেন নোবেল প্রাইজেও।

কিন্তু পরবর্তী বছরগুলিতে আর্নেস্টের তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই আরও এগিয়েছিল পারমাণবিক গবেষণা। প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল আরও উন্নত মানের, বড় আকারের কণা ত্বরকের। ফলে পৃথিবীর প্রাচীনতম এই সাইক্লোট্রন যন্ত্রই অব্যবহৃত হয়ে পড়েছিল রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ভারতে রপ্তানি করা হয় প্রাচীনতম এই সাইক্লোট্রনকে। তবে ভারতে এই যন্ত্রকে আনার জন্য উদ্যোগ নেয়নি সরকার। তরুণ গবেষক হারনাম সিং হান্স ব্যক্তিগত উদ্যোগেই ভারতে পারমাণবিক গবেষণার জন্য নিয়ে আসেন এই যন্ত্রটিকে। ১৯৬৭ সালে কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছায় ভারতের প্রথম সাইক্লোট্রন। প্যাকেজিং না খোলা অবস্থাতেই সেখান থেকে যন্ত্রটি স্থানান্তরিত করা হয় চণ্ডীগড়ের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

তবে সমস্যার বিষয় ছিল ভারতে এই যন্ত্রের পরিচালনার জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তিবিদের। তবে গবেষক হান্সই দায়িত্ব নিয়েছিলেন সবটার। তাঁর নেতৃত্বেই রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে আজও দিব্যি কার্যকর এই যন্ত্র। শুধুমাত্র ভারতেই পাঁচ দশক পেরিয়ে গিয়ে। তবে ভারতে এসে পৌঁছানোর আগেই এই যন্ত্রের বয়স হয়েছিল প্রায় তিন দশক। প্রযুক্তিগত দিক থেকে তখন অন্যান্য কণা ত্বরক যন্ত্রগুলি অনেকটাই এগিয়ে গেছে। ফলে ভারতে আসার পর সেইভাবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানের দিশা দেখাতে পারেনি প্রাচীনতম এই সাইক্লোট্রন।

আরও পড়ুন
বিশ্বের সেরা ১০০ বিজ্ঞান শহরের তালিকায় স্থান কলকাতার

এরও প্রায় এক দশক পরে স্বাধীন ভারতে তৈরি হয়েছিল প্রথম কণা ত্বরক। কলকাতাতে ভ্যারিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টারে। কিন্তু পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের এই যন্ত্রটির কথা সকলেরই বিস্মৃতির অতলে। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্যই ব্যবহৃত হয় যন্ত্রটি। তবে তাঁদের মধ্যেও অনেকে এর ইতিহাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। এই ইতিহাসকে প্রচারের আলোয় আনার দায়িত্বটাই তুলে নিয়েছে জাহ্নবী ফালকের তথ্যচিত্র ‘সাইক্লোট্রন’। পদার্থবিজ্ঞানী হান্সের অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং মরচে পড়ে যাওয়া এক খণ্ড ইতিহাসকে ধরতে চেয়েছে ক্যামেরার ফ্রেমে...

আরও পড়ুন
করোনায় প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানী শেখর বসু, শেষ হল বাঙালির বিজ্ঞানচর্চার একটি অধ্যায়

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ডাক পেয়েছেন রানি এলিজাবেথের থেকেও, বাঙালিই মনে রাখেনি বিজ্ঞানী মাধবচন্দ্র নাথ-কে

Latest News See More