'নান্দনিক রবীন্দ্রনাথ' ও সন্ধের তিলোত্তমা

“কেন আমরা কেবল রবীন্দ্রনাথের গানের ক্ষেত্রেই রাবীন্দ্রিক শব্দটা ব্যবহার করি? রাবীন্দ্রিক হয়ে ওঠা তো মানুষের জীবনে, চেতনায়।” এভাবেই আজকের সমাজে রবীন্দ্রনাথের (Rabindranath) গুরুত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন লেখক ও রবীন্দ্র গবেষক পীতম সেনগুপ্ত। গত রবিবার বিকালে নিউটাউনের ডাউনটাউন মলে বসেছিল আজকের রবীন্দ্রভাবনা নিয়ে এক মননশীল আলোচনার আসর। আয়োজনে কারু সংস্থা (Karu India)। তাঁদেরই নিজস্ব হলে অনুষ্ঠিত হল ‘টেগোর’স এসথেটিক্স অ্যাণ্ড মডার্ন ইন্ডিয়া’। পীতম সেনগুপ্তর সঙ্গে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের কবি সাহিত্যিক ফারজানা কাদের। সঙ্গে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন শিল্পী দীপাঞ্জন পাল। সব মিলিয়ে ঘণ্টাদুয়েকের আলোচনায় অন্যভাবে চেনা হল রবীন্দ্রনাথকে।

রবীন্দ্রনাথ মানে তো কেবল একজন সাহিত্যিক নন। তার সঙ্গে মানুষ রবীন্দ্রনাথকে চেনাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। পীতম সেনগুপ্তর কথায় উঠে এল সেই প্রসঙ্গই। রবীন্দ্রনাথ এমন একজন মানুষ যিনি তাঁর জীবনে নান্দনিকতাকে লালন করেছেন। কিন্তু আমরা সেই নান্দনিকতাকে কতটুকুই বা স্পর্শ করতে পারি? পীতমবাবু বলছিলেন, “আমরা দুঃখ পেলে বা আনন্দ পেলে কতবার রবীন্দ্রনাথের শরণ নিই?” আর এই কথার সঙ্গে সঙ্গে দীপাঞ্জন পালের গলায় শোনা যাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের সেইসমস্ত সুর, যা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকতে পারে। ফারজানা কাদের প্রসঙ্গক্রমে তুলে আনলেন রবীন্দ্রনাথের আন্তর্জাতিকতার ভাবনা। তাঁর জাপান ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে ফারজানা বলছিলেন, জাপানের মানুষকে রবীন্দ্রনাথ চিনেছিলেন তাঁদের মানবিক পরিসর থেকে। সেই পরিসরের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করেছিলেন বিশ্বভারতী। আন্তর্জাতিকতা তাঁর কাছে নিছক একটা দর্শন হয়ে থাকেনি, যাপনে ফুটে উঠেছিল সেই দর্শন।

প্রসঙ্গক্রমে উঠে আসে অতুলপ্রসাদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রথম আলাপের কথাও। বহু বছর পর এক সভায় অতুলপ্রসাদ নিজেই জানিয়েছিলেন সেই অভিজ্ঞতার কথা। রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতিই যেন সেই প্রথম আলাপকে নান্দনিক করে তুলেছিল। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করতে গেলে সেই মানুষ রবীন্দ্রনাথকে মনে রাখা খুব জরুরি। নাহলে বইয়ের পাতার দুই মলাটে বন্দি রবীন্দ্রনাথকে আবিষ্কার করাই সম্ভব হবে না। কারু সংস্থার আয়জনে রবিবারের সন্ধ্যায় সেই মানুষ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গেই খানিকটা পরিচয় করানোর চেষ্টা করলেন অতিথিরা।

Powered by Froala Editor

Latest News See More