উত্তর বা দক্ষিণ ভারত নয়, নেপাল বা বাংলাদেশও নয়; সুদূর ভিয়েতনামে মাটির নিচে পাওয়া গেল ১১০০ বছরের পুরনো শিবলিঙ্গ। সম্প্রতি ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্থা ভিয়েতনামের কুয়াং-নাম প্রদেশে খননকার্য চালিয়ে উদ্ধার করেছে এই শিবলিঙ্গ। বেলে পাথরের তৈরি এই একশিলা মূর্তিটি পাওয়া গিয়েছে মাই সান মন্দিরের গর্ভগৃহে। স্বাভাবিকভাবেই এই অভিনব ঘটনাকে ঘিরে উৎসাহের সঞ্চার হয়েছে অনেকের মনে।
মাই সান মন্দিরের এই শিবলিঙ্গটি হঠাৎ মনে করিয়ে দিচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক পুরনো ইতিহাস। সেইসব দিন, ভারতের গৌরবময় অতীত। নানা খাতে তখন বয়ে চলেছে ভারতের সংস্কৃতি। আর ভৌগলিক মানচিত্র ছাড়িয়ে তার প্রভাব গিয়ে পড়ছে আশেপাশের বহু দেশে। ভারতবর্ষ থেকে চিন হয়ে ভিয়েতনামে বৌদ্ধ ধর্ম প্রবেশ করে খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় বা তৃতীয় শতকে। সেই থেকেই বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব আজও চলেছে ভিয়েতনামের বুকে। তবে ভিয়েতনামের মধ্যে আরও বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিল শৈব ধর্ম। আনুমানিক দ্বিতীয় শতাব্দীতে ভিয়েতনাম দেশে তৈরি হয়েছিল চম্পা নগরী। আর এই চম্পা সাম্রাজ্য চলেছিল প্রায় চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত। রাজারা প্রত্যেকেই ছিলেন শিবের উপাসক। আর তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতাতেই তৈরি হয়েছিল এই মাই সান মন্দিরক্ষেত্র।
কুয়াং-নাম প্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে তৈরি হয়েছিল অসংখ্য শিবমন্দির। তবে কালের গর্ভে একদিন হারিয়ে যায় সবকিছু। অবশেষে ১৯০৩-০৪ সালে একদল ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিক মাটি খুঁড়ে বের করেন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। সেবার অবশ্য কোনো মূর্তি পাওয়া যায়নি। তবে মন্দিরের গঠন দেখে তাকে শিব মন্দির বলেই চিহ্নিত করা হয়েছিল। তাছাড়া এই অঞ্চলে এখনও ১১টি গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের বাস। এবং তাঁরা সকলেই শিবের উপাসক। তবে ৩০, ৪০ ও ৯০-এর দশকে খননকার্য চালিয়ে ৬টি শিবলিঙ্গ পাওয়া গিয়েছিল।
দীর্ঘদিন পর আবার মাই সান অঞ্চল থেকে উদ্ধার হল একটি শিবলিঙ্গ। আর এটিকে আগের মূর্তিগুলির থেকে অনেকটাই আলাদা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্ভবত এটিই ছিল মন্দিরের মূল বিগ্রহ। ভিয়েতনাম দেশে এই প্রাচীন শিবলিঙ্গের আবিষ্কার ইতিমধ্যে ভারতের মানুষের মনে যথেষ্ট চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। একসময় সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের যে প্রতাপ ছিল, তারই সামান্য স্ফুরণ যেন দেখা গেল মাটির নিচে।
Powered by Froala Editor