করোনার দিনগুলিতে প্রেম, ৯৫ বছরে বিবাহ মার্কিন দম্পতির

কথায় বলে, ভালোবাসার কোনো বয়স হয় না। কিন্তু প্রবাদ যাই বলুক, আজও কতজনই বা প্রেমকে তার উপযুক্ত স্বীকৃতি দিতে পারি? তবে সমস্ত সামাজিক চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই কেউ কেউ একে অপরের হাত ধরতে পারেন। এভাবেই নিউ ইয়র্ক শহরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন জন শাল্টস এবং জয় মরো-নাল্টন। দুজনেরই বয়স ৯৫। দুজনেই এর আগে দুবার জীবনসঙ্গী হারিয়েছেন। আর এই করোনা অতিমারী যখন সারা পৃথিবীকেই একাকিত্বের অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে, তখনই একে অপরকে খুঁজে পেলেন এই নবদম্পতি। অতিমারীর মধ্যেই লিখলেন ভালোবাসার নতুন রূপকথা।

জীবনে দুজন স্ত্রীর মৃত্যুর সাক্ষী থেকেছেন জন শাল্টস। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানরাও নিজের নিজের কাজের জগতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এই একাকিত্ব মাঝে মাঝে গলা চেপে ধরত জন শাল্টসের। দম বন্ধ হয়ে আসত। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। আর ঠিক এই সময় বছর দুয়েক আগে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে আলাপ হল জয় মারো-নাল্টনের সঙ্গে। তিনিও দুজন স্বামীকে হারিয়েছেন। শাল্টস বুঝেছিলেন তাঁর মনের অনুভূতিও মিলে যাচ্ছে জয়ের অনুভূতির সঙ্গে। দুজনেই দুজনের সঙ্গ চাইছেন। কিন্তু তরুণ প্রজন্মের মতো হঠাৎ প্রেমে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিলেন না দুজনের কেউই।

এর মধ্যেই এসে পড়ল করোনা অতিমারী। কিন্তু অতিমারীও দূরে সরিয়ে রাখতে পারেনি দুজনকে। সামাজিক মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন একে অপরের সঙ্গে। আর ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া শুরু হতেই দুজনে ভ্যাকসিন নিয়ে দেখা করলেন একে অপরের সঙ্গে। কিছুক্ষণ সময় কাটানোর পর নিয়ম মেনে হাঁটু মুড়ে বসে গোলাপ দিয়ে জয়কে প্রেম নিবেদন করলেন শাল্টস। যথারীতি সেই প্রস্তাবে স্বীকৃতি জানিয়েছেন জয়ও। অবশেষে সমস্ত সামাজিক ও আইনি নিয়মকানুন মেনেই সম্প্রতি তাঁদের বিবাহও হয়ে গেল। বিবাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুজনের সন্তানরাও। তাঁদের বাবা-মা যে একাকিত্ব কাটিয়ে নিজেদের জীবনের সঙ্গী খুঁজে নিতে পেরেছেন, তাতে খুশি তাঁরাও।

স্প্যানিস ভাষার বিখ্যাত ঔপন্যাসিক মার্কেজ লিখেছিলেন কলেরার দিনগুলিতে প্রেমের কাহিনি। আর বাস্তবের নিউ ইয়র্ক শহর সাক্ষী থাকল আরেক মহামারীর সময়ে প্রেমের রূপকথার। ভালোবাসার সামনে সত্যিই কোনোকিছু বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।

Powered by Froala Editor