“মার্চ ২০২০ তে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা মিলে তৈরি করে কোয়ারেন্টাইন্ড স্টুডেন্ট ইউথ নেটওয়ার্ক। তখন থেকে এখনো অবধি কোভিড পরিস্থিতিতে তারা নানা ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমফানের সময়েও চলেছে তাদের কাজ। বর্তমান পরিস্থিতিতেও নিরন্তর পরিশ্রম করছে কিএসওয়াইএন।” সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন সঙ্গীতশিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য। সম্প্রতি এই নেটওয়ার্কের জন্য অর্থসংগ্রহের উদ্দেশ্যে অনলাইন অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন দেশবিদেশের মোট ৯৫ জন শিল্পী। শনিবার সকাল থেকে রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত চলে অনুষ্ঠান। শুধুই কিএসওয়াইএন নয়, এই সংকটের সময়ে যে যেভাবে পেরেছে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। গড়ে উঠেছে ছোটো-বড়ো নানা উদ্যোগ। তবে সাধারণ ছাত্রযুবদের উদ্যোগে রাজ্যব্যাপী এমন একটা নেটওয়ার্ক সত্যিই অবাক করে। কোভিড আক্রান্ত মানুষদের জন্য অক্সিজেন ও ওষুধপত্র পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে দুর্গত মানুষদের পাশে খাবারের থালা নিয়ে দাঁড়ানো, সমস্তটাই এক সূত্রে গাঁথা।
ছাত্রযুবদের এই উদ্যোগের পক্ষ থেকে সায়ন চক্রবর্তী বলছিলেন, “আসলে আমাদের এই নেটওয়ার্কটাই একটা বড়ো শক্তি। আঞ্চলিক স্তরে উদ্যোগ অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু তা দিয়ে বেশি কিছু করা যাবে না বলেই মনে করেছিলাম। তার পরিবর্তে একটা সামগ্রিক উদ্যোগ প্রয়োজন যার উপর মানুষ ভরসা করতে পারবেন। যেখানে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিশ্রুতি শুনে ঠকে যাওয়ার ভয় থাকবে না।” এক বছরের বেশি সময় ধরে এই উদ্যোগ সেই ভরসার জায়গাটা তৈরি করতে পেরেছে। কখনও আমফান বা ইয়াস দুর্গত মানুষদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে, কখনও লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। “তবে এই সময়ে দাঁড়িয়ে একটা বিশ্বব্যাপী সংহতির বার্তা প্রয়োজন ছিল। ৫টি মহাদেশ থেকে ১৪টি দেশের ৯৫ জন শিল্পী এগিয়ে আসছেন অর্থসংগ্রহের জন্য, এটাই বড়ো কথা। অর্থসংগ্রহ তো আগেও হয়েছে, কিন্তু এই সংহতির বার্তাটা গুরুত্বপূর্ণ।” বলছিলেন সায়ন। দুদিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লোপামুদ্রা মিত্র, সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, শ্রীজাত, মৌসুমী ভৌমিক সহ অসংখ্য জনপ্রিয় মুখ। প্রত্যেকের সুরে, কথায় উঠে এসেছে দুঃসময় পেরিয়ে যাওয়ার আহ্বান।
এই সময় তো শুধুই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে লড়াই করে যাওয়ার নয়, সেইসঙ্গে একটা নিরাপদ ভবিষ্যতের স্বপ্ন বোনারও সময়। আর সেই স্বপ্নকে বুনে তুলতে পারেন শিল্পীরাই। সায়ন বলছিলেন, “যুদ্ধের বিরুদ্ধে যেমন শিল্প থাকে, আন্দোলনের পাশে যেমন শিল্প থাকে, তেমনই এই দুঃসময়েও শিল্পের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না।” কিউএসওয়াইএন-এর সঙ্গে মিলিতভাবে সেই সুসময়ের স্বপ্ন বুনে তুললেন শিল্পীরা। সাম্প্রতিক সময়ে তো বটেই, বোধহয় ভারতের ইতিহাসে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। আর এই ঐতিহাসিক উদ্যোগের ভিতর দিয়ে যে কথাটি উঠে এল, তাকে এক কথায় ব্যক্ত করেছেন সঙ্গীতশিল্পী মনোময় ভট্টাচার্য। “আমরা সকলে একটা কঠিন লড়াই করছি কিন্তু লড়াই শেষে আমরা জিতে যাবই৷”
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
পূর্বাভাস ছিল না ইয়াস-পরবর্তী জোয়ারের, বিধ্বস্ত সুন্দরবনের ‘ম্যানগ্রোভ ম্যান’ প্রণবেশ