নবতিপর ওড়িশি নৃত্যশিল্পীকে উচ্ছেদ, কেন্দ্রের পদক্ষেপে বিতর্ক

রাস্তার ধারে স্তূপাকার হয়ে পড়ে রয়েছে নিত্য-প্রয়োজনীয় নানান সামগ্রী, বিছানা, স্যুটকেস, চেয়ার-টেবিল ও অন্যান্য আসবাবপত্র। তারই মাঝখান থেকে উঁকি দিচ্ছে একটি শংসাপত্র। তাতে জ্বল জ্বল করছে ভারত সরকারের প্রতীক অশোকস্তম্ভের ছাপ। না, ফ্রেমে বাঁধানো সাধারণ কোনো সরকারি নথি নয়। আদতে তা ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী পুরস্কারের (Padmashree Award) শংসা। কার এই শংসাপত্র? কেনই বা রাস্তার ধারে এভাবে পড়ে রয়েছে সেটি? স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্ন জাগবে যে কারোর মনে।

সম্প্রতি, এমনই নিষ্ঠুরতা সাক্ষী হল সরকারের এশিয়ান গেমস ভিলেজ সরকারি আবাসন। এককথায় প্রায় টেনেহিঁচড়েই ‘ঘরছাড়া’ (Evicted) করা হল পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত অশীতিপর শিল্পীকে। ওড়িশি নৃত্যশিল্পী গুরু মায়াধর রাউত (Guru Mayadhar Raut)। ওডিসি নৃত্যকলাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার জন্য ২০১০ সালে পদ্মশ্রী পেয়েছিলেন তিনি। ৯১ বছর বয়সে এসে এবার তাঁকেই শিকার হতে হল কেন্দ্র সরকারের চরমতম অবমাননার। এমনকি রাস্তায় ফেলে দেওয়া হল রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরিত সরকারি সনদটিও! কিন্তু এই উচ্ছেদের কারণ কী?

ফিরে যেতে হবে সত্তরের দশকে। চল্লিশোর্ধ্ব শিল্পীদের জন্য সেসময় বিশেষ আবাসন প্রকল্প চালু করেছিল তৎকালীন কেন্দ্র সরকার। তিন বছরের চুক্তি বা লিজে নামমাত্র ভাড়ায় সরকারি আবাসনে থাকার সুযোগ পেতেন সেইসময়ের উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা। অবশ্য তারপর ধারাবাহিকভাবেই বাড়ানো হয়েছিল আবাসনের মেয়াদ। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর নতুন করে এই আবাসন প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করেনি মোদি সরকার। আধিকারিকদের অভিমত ২০১৪ সালেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, আবাসনগুলি খালি করে দিতে হবে শিল্পীদের। তবে অনেকে নতুন জায়গায় স্থানান্তরিত হয়ে গেলেও, এখনও পর্যন্ত খালি হয়নি ১১টি আবাসন। এবার সেইসকল শিল্পীদেরই বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করার পথে হাঁটল কেন্দ্র। 

আরও পড়ুন
বইমেলায় কাউন্টার টেবিলে চড়ে অপেরা স্টাইলে গান ধরতেন পীযূষকান্তি সরকার

সংশ্লিষ্ট ১১ জন শিল্পীর মধ্যে রয়েছে ৮ পদ্ম পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব। সেইসঙ্গে নাট্য ও সঙ্গীত অ্যাকাডেমি সম্মাননাও পেয়েছেন অনেকে। আগামী ২ মে-র মধ্যেই আবাসন ছাড়তে হবে এমন কড়া নোটিস পৌঁছেছে প্রত্যেকের কাছেই। গুরু মায়াধর রাউতের ঘটনাই যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, এই নোট অমান্য করার পরিণতি। ১১ জন শিল্পীর তালিকায় রয়েছেন বাঙালি ধ্রপদ সঙ্গীতশিল্পী রীতা গঙ্গোপাধ্যায়ও। সরকারের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর আবেদন খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। 

আরও পড়ুন
গণেশ ঘোষ থেকে বাদল সরকার— রাষ্ট্রীয় সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছেন যে-সমস্ত বাঙালি

কেন্দ্র সরকারের এই সিদ্ধান্ত শুধু অমানবিকই নয়, তাতে যথেষ্ট ফাঁক রয়েছে বলেই দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট শিল্পীদের আত্মীয় পরিজন। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৪ সালে আবাসন খালি করার সিদ্ধান্ত নিলেও, সরকারের তরফে শিল্পীদের কাছে এই নোটিস পৌঁছেছিল ২০২০ সালে। তারপর টানা ২ বছর ভারতের বুকে আতঙ্ক ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস মহামারী। এই পরিস্থিতি হঠাৎ করে বাসাবদল আদৌ কতটা সম্ভব অশীতিপর শিল্পীদের পক্ষে? প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে সেখানেই। সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীদের জোরপূর্বক আবাসন থেকে বার করে দেওয়া, এককথায় বর্বরোচিত কাজই বটে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে রীতিমতো উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। সরব হয়েছেন বহু মানুষ। প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রের সংস্কৃতি-বিমুখতা এবং শিল্পীদের প্রতি অবহেলা সম্পর্কে। কিন্তু তারপরেও কি সিদ্ধান্তে কোনো বদল আনবে সরকার? জানা নেই উত্তর…

আরও পড়ুন
পুরুষের জন্য রান্নার কোর্স, লিঙ্গবৈষম্য ঘোচাতে উদ্যোগী কেরালা সরকার

Powered by Froala Editor

More From Author See More