নব্বই বছর বয়সেও ১২০টি কুকুরের 'অন্নদাতা' এই বৃদ্ধা

ঘড়ির কাঁটায় বড়োজোর ভোর সাড়ে চারটে। তার মধ্যেই ঘুম থেকে উঠে উনুনে হাঁড়ি চড়ান তিনি। এক-দু’জন নয়, ১২০ জনের রান্না তো আর মুখের কথা নয়। ভাত আছেই, তার সঙ্গে মাংস, কোনোদিন সোয়াবিন কিংবা মুখরোচক অন্য কোনো খাবার— একা হাতে এসব বানাতে যে সময় লাগে বিস্তর। গাজিয়াবাদের বৈশালী (Vaishali) নগরের বাসিন্দা কনক সাক্সেনার দৈনিক রুটিন এমনই। কিন্তু কাদের জন্য এই সাত-সকালে হাঁড়ি চাপে তাঁর বাড়িতে?

না, যাদের জন্য এই এত আয়োজন, তারা মানুষ নয় কেউ। তারা অবলা চতুষ্পদ, পথ সারমেয়। বিগত দু’বছর ধরে এভাবেই রাস্তার কুকুরদের খাবার জোগান দিয়ে চলেছেন ৯০ বছর বয়সি বৃদ্ধা। তাঁর উদ্যমের কাছে হার মেনেছে দূরারোগ্য ব্যাধিও। হ্যাঁ, কনক আক্রান্ত দূরারোগ্য অস্টিওপোরেসিস রোগে। অর্থাৎ, ফাঁপা হয়ে গেছে তাঁর হাড়। ফলে, সামান্য আঘাতেই হাড় ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা প্রবল। সেইসঙ্গে বিগত কয়েক বছরে একাধিক অস্ত্রোপচারও হয়েছে তাঁর শরীরে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিজের দায়িত্বে অবিচল তিনি। 

অবশ্য ছোটো থেকে তিনি কুকুরপ্রেমী ছিলেন না কোনোদিনই। বরং, রীতিমতো ভয় পেতেন চতুষ্পদ প্রাণীটিকে। তবে বছর কয়েক আগে কুকুর সম্পর্কে তাঁর সমস্ত ধারণা বদলে যায়। নেপথ্যে তাঁর নাতনি সানা। সানা ছোট্ট একটি কুকুর শাবক নিয়ে এসেছিল তাঁর বাড়িতে। তারপর কখন যেন সেই কুকুর-শাবকই সবচেয়ে কাছের আত্মীয় হয়ে ওঠে কনকের। এরও বছর কয়েক পর শুরু হয় পথ-সারমেয়দের খাওয়ানোর এই উদ্যোগ।  

২০২০ সালে মার্চ মাস। লকডাউন ঘোষিত হয় দেশজুড়ে। সেইসময় দোকান-পাট, রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম খাদ্যাভাবের সম্মুখীন হয় পথসারমেয়রা। এই ঘটনাই ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে কনককে। প্রথমে পাড়ার কুকুরদের বিস্কুট খাওয়াতেন তাঁর নাতনি ও পুত্র। কিন্তু তাতে কি খিদে মেটে তাদের? তাই ভাত রান্নার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন কনক। পরিবারের আপত্তি ছিল, কিন্তু তা কানে নেননি তিনি। প্রথমে ১৫-২০ জনের মতো রান্না করতেন। সেই সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে এখন ঠেকেছে ১২০-তে। অন্যদিকে কনকের তৈরি করা রান্না গোটা অঞ্চলের কুকুরদের মধ্যে বিতরণ করেন তাঁর নাতনি সানা। 

প্রতি কুকুর পিছু এই প্রকল্পের জন্য খরচ হয় মাসে ৩৫০ টাকা। অর্থাৎ সবমিলিয়ে প্রায় ৪৮ হাজার টাকার খরচ। তাই নিজের সঞ্চয় ছাড়াও এই প্রকল্পের জন্য তাঁকে নির্ভর করতে হয় সাধারণ মানুষদের সাহায্যের ওপর। প্রথম সাড়া না পেলেও, পরবর্তীতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন বৈশালীর স্থানীয়রা। কনকের দৌলতেই তাঁরাও এখন পরিবারের অংশ করে নিয়েছেন রাস্তার কুকুরদের…

Powered by Froala Editor