অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রমাণ, ৯০ বছর বয়সে স্নাতক ডিগ্রি লাভ বৃদ্ধার!

আজ থেকে ৭১ বছর আগের কথা। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৯ বছর। সদ্য উচ্চবিদ্যালয় থেকে পাশ করে কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। স্বপ্ন অর্থনীতিতে স্নাতক হবেন তিনি। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে যায় তাঁর। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। সংসারের দায়িত্ব এসে পড়েছিল কাঁধে। ভেবেছিলেন সংসারের চাপ কমলে, সুযোগ বুঝে ফের কলেজে ভর্তি হবেন তিনি। তবে সেই সুযোগের জন্য যে ৬৮ বছর অপেক্ষা করতে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। 

জয়েস ডিফো (Joyce DeFauw)। সম্প্রতি ৯০ বছর বয়সে গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে নজির গড়লেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (US) ইলিনয়ের এই বাসিন্দা। প্রমাণ করলেন, শিক্ষালাভের ক্ষেত্রে বয়স নেহাতই সংখ্যামাত্র। 

অবশ্য তাঁর এই লড়াই খুব একটা সহজ ছিল না মোটেই। বিবাহের সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই তিন সন্তানের মা হন জয়েস। তার বছর দেড়েকের মধ্যেই প্রয়াত হয়েছিলেন তাঁর স্বামী। একা হাতে সেসময় যেমন সংসার সামলাতে হত তাঁকে, তেমনই উপার্জনের জন্যেও পায়ে ফেলতে হয়েছিল মাথার ঘাম। এর প্রায় ৫ বছর পর পুনরায় বিবাহ করেন জয়েস। জন্ম নেয় আরও তিনটি সন্তান। দ্বিতীয় স্বামী পরিবারের অর্থনৈতিক হাল ধরলেও, বাড়ির পরিস্থিতি বদলায়নি কখনোই। ছয় সন্তান মানুষ করা মুখের কথা? ফলে, নিজের পড়াশোনার জন্য আর সময় বের করে উঠতে পারেননি তিনি।

বছর চারেক আগের কথা। ২০১৯ সালে গল্পের ছলেই এই আক্ষেপের কথা নাতনির কাছে বলে বসেছিলেন জয়েস। সে তখন নর্দার্ন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। পড়াশোনা করছে বিজ্ঞান নিয়ে। ঠাকুমার স্বপ্নপূরণ করতে নিজে উদ্যোগ নিয়েই কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সে। ঠিক হয় নতুন বছরে তরুণ-তরুণীদের সঙ্গেই ক্লাস শুরু করবেন জয়েস। 

অবশ্য এতকিছুর পরেও আর কলেজের গণ্ডিতে পা রাখা হয়নি জয়েসের। ২০২০ সালের শুরু থেকেই থাবা বসায় করোনাভাইরাস। দেশজুড়ে জারি হয় লকডাউন। অবশ্য কলেজে না যেতে পারলেও, থেমে থাকেননি তিনি। বরং, বাড়িকেই বদলে ফেলেছিলেন ক্লাসরুমে। সেবারেও ত্রাতা হয়ে হাজির ছিল তাঁর নাতনি। কম্পিউটার স্ক্রিন, ওয়েব ক্যামেরা, স্পিকার— সমস্ত কিছুর বন্দোবস্ত করে দিয়েছিল সে। কীভাবে ই-মেইল দেখতে হয়, ইন্টারনেট থেকে কীভাবে ডাউনলোড করতে হয় পড়াশোনার নোটস— তাও নাতনির কাছেই শিখেছেন জয়েস। 

সপ্তাহ তিনেক আগেই প্রকাশিত হয় চলতি বছরের চূড়ান্ত বর্ষের ফলাফল। আর সেই পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গেই উত্তীর্ণ হয়েছেন ৯০ বছর বয়সি ‘তরুণী’। নামের আগে বসেছে ‘স্নাতক’ তকমা। এবার অবশেষে এই ডিগ্রি লাভের শংসাপত্র নিতেই প্রথমবার কলেজ চত্বরে পা রাখবেন তিনি। টুপি ও গাউন পরে হাঁটবেন কলেজের মঞ্চে। জয়েসের এই সাফল্যের গল্প রীতিমতো ‘ভাইরাল’ যুক্তরাষ্ট্রে। স্কুলছুট কিংবা কলেজছুট হাজার হাজার প্রবীণ-প্রবীণাকেও নতুন করে শিক্ষালাভের জন্য অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে তাঁর এই লড়াই-এর কাহিনি…

Powered by Froala Editor

Latest News See More