গত ২১ সেপ্টেম্বর সোমবার অদ্ভুত এক দৃশ্যের সাক্ষী থাকল অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া প্রদেশ। কারণ সোমবার সকাল থেকেই শ’য়ে শ’য়ে তিমি ভিড় জমায় ছোট্ট এই দ্বীপরাজ্যের পশ্চিম উপকূলের ম্যাকওয়ারি হারবারের সমুদ্রতটে। ঘটনার খবর পেয়েই সন্ধেবেলা ওই অঞ্চলে পৌঁছান সামুদ্রিক প্রাণী উদ্ধারকারীদের ৮০ জনের একটি দল। তবে ইতিমধ্যেই ৯০টি তিমির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
জানা গিয়েছে তিমিগুলি পাইলট হোয়েল প্রজাতির। যা একপ্রকার ডলফিনেরই বংশজাত। তবে দৈর্ঘ্যে সাত মিটারের এই তিমিগুলির আয়তন অনেকটাই বড় ডলফিনের তুলনায়। ভর হতে পারে ৩ মেট্রিক টন অবধি। উদ্ধারকারী দলটি প্রথম ম্যাকওয়ারির একটি অংশে কমপক্ষে ২০০টি তিমিকে খুঁজে পান। তার খানিকক্ষণের বাদেই কিলোমিটার খানেকের দূরত্বে বিক্ষিপ্তভাবে আরো ৩০টি এবং আরও খানিক দূরে ৪০টি তিমি খুঁজে পান তাঁরা।
মঙ্গলবার দীর্ঘক্ষণের চেষ্টার পর ২৫টি তিমিকে সমুদ্রে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন উদ্ধারকারী দলটি। পাইলট হোয়েলের এই প্রজাতি সমুদ্রতটে চলে আসার পরেও তিন থেকে চারদিন অবধি বেঁচে থাকে। তা-ই যেন এখন ভরসার একমাত্র দিক হয়ে দাঁড়িয়েছে উদ্ধারকারীদের কাছে। আরও কিছু তিমিকে বাঁচানো যাবে বলেই, আশাবাদী তাঁরা।
সমুদ্রসৈকতের তুলনামূলক শুকনো জায়গায় আটকে পড়ায়, তিমিগুলির শারীরিক অবস্থাও যথেষ্ট খারাপ। ত্বকও শুষ্ক হয়ে যাওয়ায় অগভীর জলে ভাসতে সমস্যা হচ্ছে প্রাণীগুলির। ফলত গভীর সমুদ্রে তাদের নিয়ে গিয়ে ছাড়তে হচ্ছে তাদের। কিন্তু ৩ টনের দৈত্যাকার এই তিমিকে নৌকায় এতটা পথ নিয়ে যাওয়াই কার্যত অসাধ্যসম হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের কাছে। তবুও সফলতা এসেছে খানিকটা হলেও।
আরও পড়ুন
তিমি এবং ডলফিনের মৃত্যুতে ঘাতক শব্দদূষণই, চাঞ্চল্যকর তথ্য জার্মান গবেষকের
সমুদ্রতটে চলে এসে তিমির মৃত্যু নতুন কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু এত তিমির একসঙ্গে মৃত্যু রীতিমত চিন্তিত করে তুলেছে বিজ্ঞানীদের। গত এক দশকে এমন ঘটনা এই প্রথম। এর আগে ২০০৯ সালে তাসমানিয়াতেই একই সঙ্গে সমুদ্রতটে চলে এসেছিল ২০০টি তিমি। সেই রেকর্ডই ভেঙে গেল সোমবার। নিউজিল্যান্ডেও বছর দুয়েক আগে এক সপ্তাহের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে ২০০টি পাইলট হোয়েলের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু এই ঘটনা সত্যিই বিরল।
আরও পড়ুন
ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রতটে উদ্ধার দশটি বিশালাকার মৃত তিমি, স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় একটি ফিরল সমুদ্রে
তবে কী কারণে তিমিগুলি দলবদ্ধভাবেই সমুদ্র উপকূলে চলে এল, তা অপরিষ্কার বিশেষজ্ঞদের কাছেই। তাঁদের অনুমান, সামাজিক জীব হওয়ায় যে কোনো তিমির ঝাঁকেই দলনেতা থাকে একটি। বাকিরা তাকেই অনুসরণ করে। এমনই দু’-একটি তিমি ভুল পথে চলে আসার কারণে বাকিরা স্বভাবসিদ্ধভাবেই হয়তো তাকে অনুসরণ করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা...
আরও পড়ুন
মন্দারমণির সমুদ্রতটে ৩৬ ফুট লম্বা তিমির মৃতদেহ, স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্য
Powered by Froala Editor