৯ বছর বয়সেই ‘ম্যাজিক কুইন’, জাদুর খেলায় সবাইকে তাক লাগাচ্ছে মিমি

“বয়স তখন মাত্র ৬-৭। প্রথমবার মঞ্চে উঠছে মেয়ে। পাশ থেকে এক ভদ্রলোক বলে উঠলেন, ‘স্টেজে উঠে কী করবি রে তুই?’ উত্তরে ও বলেছিল, ‘ফাটিয়ে দেব!’ মেয়ের কনফিডেন্স দেখে আমি তো থ!”

বলছিলেন মিমির বাবা। মিমি হালদার (Mimi Halder) ওরফে ‘ম্যাজিক কুইন মিমি’। গতকাল নন্দনে আয়োজিত ত্রয়োদশতম রাজ্য শিশু কিশোর উৎসবে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে। ৯ বছর বয়সী এই ক্ষুদে ম্যাজিশিয়ানের (Magician) দেখে হাততালিতে ফেটে পড়েছে আট থেকে আশি। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ম্যাজিক অ্যাসোসিয়েটস অথবা ফিমা-র কনিষ্ঠতম সদস্যও ক্লাস ফোরের এই পড়ুয়া। বলে রাখা ভালো, ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ম্যাজিক অ্যাসোসিয়েটস প্রতিবারের মতো এবারও ছিল এই মেলায়। ছিলেন ফিমার সঙ্গে যুক্ত বহু নামী এবং উদীয়মান ম্যাজিশিয়ানরা। ২০০৭ সাল থেকে ফিমা ভারতবর্ষে ম্যাজিক প্রসারের কাজ করে চলেছে। লকডাউনে তারা আয়োজন করেছে একাধিক অনলাইন কর্মশালা। শিশুদের মনে ম্যাজিক নিয়ে কৌতূহল এবং উৎসাহ চাগিয়ে তোলার উদ্দেশ্যেই ফিমার এই স্টল। ম্যাজিক তো ছিলই, সঙ্গে ছিল স্যান্ড আর্ট, ছায়াবাজি এবং কথা বলা পুতুলের খেলা। মিমির উপস্থাপনায় সাধারণ দর্শকরা তো বটেই ম্যাজিশিয়ানরাও মুগ্ধ। অনেকেই প্রস্তাব রেখেছেন একক কিংবা যৌথ প্রদর্শনীর।

ইস্কুলে মিমির ম্যাজিকের ভক্ত কম নেই। বন্ধুবান্ধব, শিক্ষিকারাও উৎসাহ দেন নিয়মিত। তবে মিমির জাদু-যাত্রার সবচেয়ে বড়ো অনুপ্রেরণা তার বাবা। তিনিই ‘ম্যাজিক কুইন’-এর প্রথম মুর্শিদ। বিখ্যাত ম্যাজিশিয়ান ‘পিটার প্যান’-এর প্রাক্তন এই ছাত্র নিজের সন্তানের মধ্যেই বপন করেছেন ‘ভোজবিদ্যা’র বীজ। 

‘১২টি কলার সব গুণাগুণ কমবেশি পাওয়া যাবে ম্যাজিকে। একজন ম্যাজিশিয়ানকে গানও জানতে হয়। পারফর্মিং আর্টের শীর্ষে রয়েছে ভোজবিদ্যা। ফলে মিমি যদি ভবিষ্যতে অন্য কোনো আর্ট নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করতে চায়, ম্যাজিক তাকে প্রভূত সাহায্য করবেই। মা বাবাদের উচিত তাঁদের সন্তানদের মধ্যে ম্যাজিকে ছড়িয়ে দেওয়া।’ 

মিমির বাবার কথাই প্রতিধ্বনিত হল ম্যাজিশিয়ান শ্যামল কুমারের কথায়। আজ শিশু কিশোর উৎসবে তাঁরও শো। জাদুর জগতে শ্যামল কুমার অত্যন্ত পরিচিত নাম। ছোটোদের মধ্যে ম্যাজিক প্রসারের কাজ তিনি বহুদিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর গ্রন্থ ‘সহজ তাসের ম্যাজিক’ এবং ‘এসো ম্যাজিক শিখি’ উৎসাহীদের অবশ্যপাঠ্য। শ্যামল বলছিলেন, ‘নিয়মিত ম্যাজিক অভ্যাস শিশুদের মনঃসংযোগ বাড়ায়। দূর করে মঞ্চভীতি। তাদের ভাব প্রকাশ করার ক্ষমতাও বিকশিত হয় অনায়াসে। তারা বেড়ে উঠলেও ম্যাজিক তাদের ছাড়ে না।’ 

ফিমার সঙ্গে যুক্ত প্রবীণ ম্যাজিশিয়ানরা আপাতত উত্তরপ্রজন্মের মধ্যেই জাদুবিদ্যার পরম্পরাকে বুনে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। মিমির মতোই মেদিনীপুরের একটি মেয়ের কথাও বললেন, শ্যামলবাবু। গতানুগতিক পেশায় না গিয়ে ম্যাজিককে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছে নতুম প্রজন্মের অনেকেই। 

লকডাউনে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ম্যাজিক শো। রোজগারের মুখ দেখছিলেন না জাদুশিল্পীরা। পাশে দাঁড়ায় ‘ফিমা’। ফিমার অন্যতম মুখ কৌশিক বসু বা ‘স্যান্ড কৌশিক’-এর সঙ্গে আলাপে ফিরে ফিরে এল ‘ফিমা’র স্বজনবন্ধুদের কথাও। ঝড়ঝাপ্টা পেরিয়ে বাংলায় ম্যাজিক প্রসারের কাজটি সফলভাবে করে চলেছে ফিমা। এবং তাদের হাত ধরেই জন্ম নিচ্ছে মিমির মতো ভবিষ্যতের জাদুসম্রাজ্ঞীরা।

Powered by Froala Editor

Latest News See More