ক্রমশ নগরায়নের পথে হাঁটছে গোটা দেশ। কাটা পড়ছে হাজার হাজার গাছ। গড়ে উঠছে শপিং মল, বহুতল, চওড়া রাস্তা। দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য এই উন্নয়ন যে জরুরি, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। তবে মানুষের এই অগ্রগতিকে খুব একটা ভালো চোখে দেখছে না প্রকৃতি। বরং, ইট-কংক্রিট-পাথরের পরিকাঠামো নষ্ট করছে প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে। ত্বরান্বিত করছে জলবায়ু পরিবর্তনকে (Climate Change)। আগামীতে যার ভয়াবহ প্রভাব পড়তে চলেছে ভারতের ৯টি রাজ্যে।
সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করল জলবায়ু সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ‘ক্রস ডিপেনডেন্সি ইনিশিয়েটিভ’ (XDI)। পৃথিবীর কোন কোন অঞ্চলে আঞ্চলিক জলবায়ু সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে আগামী আড়াই দশকে, তারই একটি মডেল প্রকাশ করল আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। সবমিলিয়ে বিশ্বের ২৬০০টি রাজ্য এবং প্রদেশের বিগত ৩০ বছরের উন্নয়ন এবং জলবায়ু সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছিল এই সংস্থা। আর তার ওপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয় বিশেষ মডেল। এই মডেল অনুযায়ীই, প্রথম ৫০টি ঝুঁকিপূর্ণ রাজ্যের তালিকায় জায়গা পেয়েছে ভারতের ৯টি রাজ্য।
এই তালিকায় রয়েছে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র এবং অসমের মতো রাজ্য। তবে প্রতিক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে ভিন্ন ভিন্নভাবে। যেমন গবেষণা অনুযায়ী, অসম এবং বিহারের মতো রাজ্যে আগামীদিনে বৃদ্ধি পাবে বন্যার প্রকোপ। অন্যদিকে মহারাষ্ট্র কিংবা দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে দেখা দিতে পারে তীব্র জলাভাব। ওড়িশা কিংবা বাংলায় দেখা যাবে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব। উল্লেখ্য, আঞ্চলিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং বৃষ্টিরেখার পরিবর্তনই এমন আশ্চর্য জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ বলেই চিহ্নিত করছেন গবেষকরা।
অবশ্য শুধু ভারতই নয়। প্রথম ৫০টি রাজ্য ও প্রদেশের তালিকায় ৮০ শতাংশ অঞ্চলই রয়েছে চিন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত— এই তিনটি দেশের মধ্যে। ফলে, এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকাতেই সবচেয়ে বেশি প্রকট হবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, তা একপ্রকার বলাই যায়। অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় শীর্ষ ২০০টি শহরের অর্ধেকেরও বেশি এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত। সেই তালিকায় রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, চিন-সহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অধিকাংশ দেশ। সবমিলিয়ে বৃক্ষরোপণ এবং পরিকল্পনাহীন উন্নয়ন বড়ো বিপদ ডেকে আনতে পারে এশিয়ায়, সে-ব্যাপারেই সতর্ক করছেন গবেষকরা…
Powered by Froala Editor