দীর্ঘ সাত দশকের সমাজসেবার স্বীকৃতি, পদ্মশ্রী পেলেন উড়িষ্যার ‘নিঃস্বদের মা’

বয়স তখন মাত্র ১৭ বছর। গান্ধীজি আর বিনোবা ভাবে-র কর্মযজ্ঞে অনুপ্রাণিত হয়েই বাড়ি ছাড়লেন কিশোরীটি। ছাড়লেন পড়াশোনাও। কারণ, গান্ধীজি যে আর নেই। দরিদ্র শিশু, ভাগ্যহীন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে কে তবে? যদি গান্ধীজির সেই অপূর্ণ কাজের দায়িত্ব খানিকটাও নিজের কাঁধে তুলে নেওয়া যায়। সেদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে আর পিছনে তাকাননি উড়িষ্যার কোরাপুটের শান্তি দেবী। সঙ্গ দিয়েছিলেন তাঁর স্বামী রতন দাসও। আজ ৮৬ বছর বয়সেও সমানভাবে করে চলেছেন সমাজসেবা। তাঁর এই উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডের জন্য এবার পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত হলেন উড়িষ্যার ‘নিঃস্বদের মা’।

হ্যাঁ, এই নামেই পরিচিত তিনি গোটা উড়িষ্যায়। কারণ উড়িষ্যার অনাথ, গৃহহীন সকল শিশুই তাঁর সন্তান। তাঁদের নিয়েই এক বিশাল পরিবার শান্তি দেবীর। বর্তমানে উড়িষ্যায় মোট তিনটি শিশু প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সেখানে শিশুদের মানুষ করা থেকে শুরু করে পড়াশোনা সবটাই হয় শান্তি দেবীর তত্ত্বাবধানে। পাশাপাশি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্যও দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছেন তিনি। ১৯৯৩ সালে গুনুপুরের নিকটবর্তী লিমামেদা গ্রামে তফসিলি সম্প্রদায়ের মেয়েদের জন্য তৈরি করে ফেলেছেন একটি আস্ত কমপ্লেক্স। নিখরচায় তাঁদের পড়াশোনা এবং বিভিন্ন রকম হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেছেন তিনি।

শান্তিদেবী মনে করেন সমাজের অধিকাংশ সমস্যাই মিটে যাবে যদি মাদকতাকে মুছে দেওয়া যায়। মদাসক্তি কাটানোর জন্য সাড়া উড়িষ্যাজুড়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি বর্তমানে। তবে মাদক প্রতিকারে সরকারের ভূমিকায় বেশ খানিকটা অসন্তুষ্ট তিনি। বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি সরকারের কাছে আবেদন করে আসছেন মাদক উৎপাদন এবং সেবন নিয়ন্ত্রণের জন্য।

বর্তমানে তাঁর সঙ্গে রয়েছে প্রায় ৫০ জন সমাজকর্মী এবং ৫০০-র বেশি স্বেচ্ছাসেবীরা। সারা রাজ্যজুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর কর্মকাণ্ড। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিজে এতটুকু বিরাম নেন না ৮৬ বছরের শান্তিদেবী। তবে এতকিছুর পরেও তাঁর বিশ্বাস আরও বেশি কাজই করতে পারতেন তিনি। তবে সময় আর আর্থিক প্রতিবন্ধকতা বাধ সেধেছে তাঁর কাছে। তাই জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এই লড়াই চালিয়ে যেতে চান, এমনটাই জানান তিনি।

এই বিপুল আয়োজন, কর্মকাণ্ডের জন্য কোনোদিন কোনো বিজ্ঞাপন দেননি শান্তিদেবী। সাহায্যের জন্য আবেদনও করেননি কোথাও। বরং মনোযোগ দিয়ে শুধু পালন করে গেছেন নিজের দায়িত্বটুকু। তবে তাঁর সততা এবং কাজ দেখেই নিজে থেকে এগিয়ে এসেছেন অনেকে। যাঁদের সাহায্য না পেলে হয়তো এতদূর আসা হত না তাঁর। পদ্মশ্রী পাওয়ার পর তাঁদের সকলকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন শান্তিদেবী…

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
জৈব কৃষিতে বিপ্লব এনে পদ্মশ্রী পেলেন তামিলনাড়ুর ১০৫ বছরের ‘তরুণী’

More From Author See More

Latest News See More