প্রস্তাবিত কৃষি বিল নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল অনেক আগেই। ফলে এই নিয়ে রাজ্যসভায় বিতর্ক তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এই বিতর্ককে কেন্দ্র করেই নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকল ভারতের সংসদীয় ইতিহাস। রবিবার প্রস্তাবিত বিলটি নিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর জেরে শেষ পর্যন্ত ৮ জন সাংসদকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিলেন চেয়ারম্যান ভেঙ্কাইয়া নাইডু।
প্রস্তাবিত কৃষি বিলে কৃষকদের নূন্যতম সমর্থন মূল্যের বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। মূলত এটাই ছিল বিরোধিতার প্রধান অক্ষ। ফলে রবিবার সকাল থেকেই উত্তেজিত ছিলেন বিরোধী সাংসদরা। অন্যদিকে শাসক দলের সাংসদদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, বিরোধীরা কৃষকদের ভুল বোঝাচ্ছেন। আসলে এই বিলের ফলে ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হবে। অন্যদিকে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ ব্রায়েন সহ বিরোধীদের কথায়, আসলে সরকারই মিথ্যাচার করছেন। এই প্রতিশ্রুতির কোনো বাস্তব প্রতিফলন নেই প্রস্তাবিত বিলে।
রবিবার রাজ্যসভায় এই বিল পেশ করা হলে বিরোধীরা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। এর মধ্যে সরাসরি ভোটের পরিবর্তে ধ্বনিভোটের মাধ্যমে বিলটি পাশ করানোর সিদ্ধান্ত নেন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবও আনেন বিরোধীরা। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ডেপুটি চেয়ারম্যান এখানে শাসকদলের মতো ব্যবহার করছেন। সংসদীয় রাজনীতিতে এই ব্যবহার প্রত্যাশিত নয়। সমাজবাদী পার্টির সাংসদ রামগোপাল যাদবের অভিযোগ, সরকার এই বিল নিয়ে আসলে কোনো বিতর্কই চায় না। যত তাড়াতাড়ি বিল পাশ করানো যায়, সেটাই যেন একমাত্র উদ্দেশ্য।
রবিবার ধ্বনিভোটে বিল পাশ করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে বিরোধীরা হই হই করে ওয়েলে নেমে প্রতিবাদ দেখাতে শুরু করেন। আর এর ফলে সভার কাজে বিঘ্ন ঘটে। আর সেই কারণেই সংসদ অবমাননার দায়ে শেষ পর্যন্ত বহিষ্কার করা হল ৮ জন সাংসদকে। এর মধ্যে আছেন বাংলার দুই সাংসদ, ডেরেক ও’ ব্রায়েন এবং দোলা সেন। এছাড়া বাকিরা হলেন রাজীব শতাভ, রিপুন বরা, সৈয়দ নাসির হুসেন, কেকে রাগেশ, এলাম আরাম করিম এবং সঞ্জয় সিংহ।
আরও পড়ুন
কৃষিক্ষেত্রেও ‘বেসরকারিকরণ’? কৃষি সংশোধনী বিল নিয়ে বিতর্ক চরমে
এই ৮ জন সাংসদ চলতি বাদল অধিবেশনের কোনো সভায় অংশ নিতে পারবেন না বলে জানানো অয়েছে। যদিও এই ঘোষণাকে ঘিরেও সোমবার সকাল থেকেই উত্তাল রাজ্যসভা। সংসদীয় গণতন্ত্রের মন্দিরে এরকম বিশৃঙ্খলা স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলেও মনে করছেন অনেকে। একটি বিলের বিরোধিতা করার জন্য এভাবে সাংসদদের কণ্ঠরোধ করা হলে তা ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকারক উদাহরণ হয়ে থাকতে পারে, এমনটাই মত বিরোধীদের।
আরও পড়ুন
কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের পিরিয়ড লিভ 'প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ' নাকি 'অনৈতিক সুবিধা', বিতর্ক তুঙ্গে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
এলগার পরিষদ মামলায় তলব বিজ্ঞানী পার্থসারথি রায়কে, এনআইএ-র পদক্ষেপে বিতর্ক