প্রতি বছরই শিক্ষা কিংবা কর্মক্ষেত্রের খোঁজে ভারত ছাড়েন লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণী। আর তার অন্যতম কারণ, ভারতে এখনও পর্যন্ত মেধার নিরিখে প্রথম সারির শিক্ষার্থীদের জন্য যথাযথ পরিকাঠামো বা সুযোগ নেই। ২০২০ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রকাশিত অভিবাসী (Immigrants) সংক্রান্ত পরিসংখ্যান থেকেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল সে-কথা। চিনের পরেই দ্বিতীয় স্থানে ছিল ভারত। তবে এবার খোদ সরকারের শীতকালীন অধিবেশনে প্রকাশিত রিপোর্ট রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিল দেশজুড়ে। শুধু রাষ্ট্রত্যাগই নয়, বিগত ৭ বছরে নাগরিকত্ব (Citizenship) ছেড়েছেন ৮ লক্ষের বেশি ভারতীয়।
সম্প্রতি সংসদের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানান, বিগত সাত বছরে ভারতের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন ৮ লক্ষ ৮১ হাজার ২৫৮ জন ভারতীয়। যার মধ্যে ১ লক্ষ ১১ হাজার মানুষ ভারতের নাগরিকত্ব ছেড়েছেন শুধু চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে। অন্যদিকে ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন মাত্র সাড়ে ১০ হাজার বিদেশি নাগরিক। কিন্তু এনআরসি-র সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হওয়ায় তাঁরা এখনও ভারতীয় নাগরিক হয়ে উঠতে পারেননি। নাগরিকত্বের এই সমীকরণ যে ভারসাম্যহীন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, বর্তমানে কর্মসূত্রের বিদেশে বসবাস করছেন ১ কোটিরও বেশি ভারতীয়। ফলে, আগামীদিনে দেশত্যাগীর সংখ্যাটা আরও বাড়ার সম্ভাবনাও প্রবল। কিন্তু এই বিপুল মানুষের নাগরিকত্ব ত্যাগের কারণ কী? উপযুক্ত কর্মসংস্থান এবং শিক্ষা পরিকাঠামোর অভাবের দিকেই আঙুল তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি দেশবাসীদের যথাযথ নিরাপত্তা প্রদানেও ব্যর্থ সরকার, এমন অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলনেতারা।
ভারত কিংবা চিনের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে ব্রেইন ড্রেইন কোনো নতুন সমস্যা নয়। এমনকি চিনের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ নাগরিকই বেছে নেন বিদেশে কাছ করার সুযোগকে। তাতে পারতপক্ষে লাভবান হয় খোদ রাষ্ট্রই। বৈদেশিক উন্নতমানের শিক্ষাগ্রহণ করে দেশে ফেরার পর, দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেন অভিবাসী নাগরিকরা। অস্বীকার করার জায়গা নেই, সেই পরিস্থিতি বা সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ ভারত প্রশাসন। অভিবাসীদের এই স্থায়ী দেশত্যাগ ক্ষতিগ্রস্ত করছে ভারতের অর্থনীতিকেই। ক্রমবর্ধমান নাগরিকত্ব ত্যাগের এই হার চিন্তার ভাঁজ ফেলছে বিশেষজ্ঞদের কপালে…
Powered by Froala Editor