১৯৭০ সাল। গবেষণার কাজে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। পড়াশোনায় মন্দ ছিলেন না মোটেই। ফলে সম্মানজনক ‘ফুলব্রাইট’ বৃত্তিও জুটে গিয়েছিল পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে গাণিতিক সমাজবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেছিলেন তিনি। প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্রও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডিগ্রি পাওয়া হয়ে ওঠেনি আর। পারিবারিক সমস্যার জন্য পিএইচডি সম্পূর্ণ করার আগেই খালি হাতে ব্রিস্টলে ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁকে।
ডঃ নিক অ্যাক্সটেন (Dr. Nick Axten)। সম্প্রতি ৭৬ বছর বয়সে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পিএইচডি ডিগ্রিলাভ করে এক অনন্য নজির গড়লেন তিনি।
হ্যাঁ, নজিরই বটে। কারণ শেষ বয়সে এসে গবেষণার জগতে পা রাখা নিঃসন্দেহে এক আশ্চর্য ঘটনা তো বটেই। তবে আরও অবাক করার বিষয় হল, যৌবনে যে বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছিলেন নিক, এই পিএইচডি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়ে। হ্যাঁ, গণিতের ব্যবহারিক প্রয়োগ করলেও, মূলত তিনি কাজ করেছেন মানুষের আচরণগত মনোবিজ্ঞান, মূল্যবোধ এবং দর্শনের ওপর। কিন্তু কীভাবে তিনি বদলে ফেললেন নিজের বিষয়?
আসলে, ৭৬ বছর বয়সে পিএইচডি লাভ করলেও, তার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে তাঁর দীর্ঘদিনের পরিশ্রম। ফিরে যেতে হবে বছর দশেক আগে। কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নেওয়ার পরই নতুন করে পড়াশোনার জগতে পা রেখেছিলেন অক্সটেন। অনিয়মিতভাবে কলেজের ক্লাস করে সম্পূর্ণ করেছিলেন আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্তরের পড়াশোনা। বিষয় ছিল দর্শন। আসলে নিজের গবেষণার কাজ ছেড়ে ঘরে ফিরে আসার পরই দৈনন্দিনের গতানুগতিক জীবনে বাঁধা পড়েছিল তার যাপন। বিশেষভাবে ভাবিয়ে তুলেছিল সাধারণ মানুষের মানসিকতা, তাঁদের প্রতিবন্ধকতা। আর তা নিয়েই নিয়মিত কোনো না কোনো বই পড়তেন তিনি। পাশাপাশি শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত থাকায় পড়াশোনার সঙ্গে কোনোদিনই দূরত্ব তৈরি হয়নি তাঁর। ফলে, অবসরের পর আবার আনুষ্ঠানিকভাবে পড়াশোনা শুরু করতেও অসুবিধা হয়নি কোনো।
২০১৮ সালে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করার পর, গবেষণা শুরু করেন ব্রিটিশ প্রবীণ। সময় লাগে পাঁচ বছর। তার মধ্যেই আচরণগত মনোবিজ্ঞান নিয়ে প্রকাশিত হয় তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। গণিত এবং দর্শনের মাধ্যমেই বিষয়টিকে নতুন আঙ্গিক দিয়েছেন তিনি। অ্যাক্সটেনের এই কর্মকাণ্ড রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে যুক্তরাজ্যে। হাজার হাজার কলেজছুট প্রবীণ-প্রবীণাদের কাছে এখন পড়াশোনার জগতে ফেরার অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন ৭৬ বছর বয়সি গবেষক…
Powered by Froala Editor