মঙ্গোলিয়ার একটি ঘটনা এবার সত্যিই অবাক করে দিল অর্নিথোলজিস্টদের। দু’ডানায় ভর করে একটি কোকিল অতিক্রম করল ১২০০০ কিলোমিটার পথ। সকলকে চমকে দিয়ে পরিযায়নের সমস্ত রেকর্ডই ভেঙে দিল পাখিটি।
‘ওয়াইল্ড বার্ড ট্র্যাকিং’। এই কথাটার সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। বন্য পাখিদের পরিযায়ন পর্যবেক্ষণের জন্য এই পদ্ধতিটি ইদানীং বহুল ব্যবহৃত। পরিযায়ী পাখিদের পিঠে লাগিয়ে দেওয়া হয় ছোট্ট জিপিএস ট্র্যাকার। আর তার মাধ্যমেই পরিযায়ী পাখিদের গতিবিধি লক্ষ্য করেন বিজ্ঞানীরা।
প্রতিবছরই শীতকালে আফ্রিকার জাম্বিয়ায় হাজির হয় হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি। গত ২০শে মার্চ জাম্বিয়ার শীতসফর শেষ করে পূর্ব দিকে পাড়ি দিয়েছিল এমনই একটি কোকিল। মঙ্গোলিয়ার একটি পাখি বিশেষজ্ঞের দল আগের গ্রীষ্মেই তার পিঠে স্যাটেলাইট জিপিএস বসিয়েছিলেন। মঙ্গোলিয়ার একটির নদীর নামেই কোকিলটির নামকরণ করা হয়েছিল ‘ওনান’। তবে শুধু ওনান নয়, মোট ৫টি পাখির উপরে এই গবেষণা চালিয়েছিল ওই দল। যার মধ্যে একমাত্র ওনানই তার পর্যটন শেষ করে ফিরে আসে পূর্ব বাসস্থানে।
মাত্র দু’সপ্তাহে সাড়ে সাত হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে ওনান। ভ্রমণ করে ১৬টি দেশ। তবে তার গতিপথ আশ্চর্য করেছে বিজ্ঞানীদের। ভারত মহাসাগরের ওপর দিয়ে প্রায় হাজার কিলোমিটার সমুদ্রপথ, না থেমে একটানা উড়েছে ওনান। তীব্র হাওয়ার দাপটের মধ্যেও সে গড় গতিবেগ বজায় রেখেছিল ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। সৌদি আরব থেকে, ভারত, বাংলাদেশ, চিন হয়ে পৌঁছায় মঙ্গোলিয়ায়। যা যে-কোনো পরিযায়ী প্রাণীদের ভ্রমণের সমস্ত রেকর্ডের ঊর্ধ্বে।
তবে ওনানের সঙ্গে জাম্বিয়া থেকে যাত্রা শুরু করেছিল আরো একটি একই প্রজাতির কোকিল, বায়ান। চিনে উনান প্রদেশে পৌঁছে থেমে যায় তার গতিবিধি। বিজ্ঞানীদের ধারণা— হয় পরিশ্রান্ত হয়ে মারা গেছে পাখিটি, নয় শিকার হয়েছে মানুষের হাতে।
এই লকডাউনে যখন মানুষ গৃহবন্দি, স্বব্ধ হয়ে গেছে জীবনযাত্রা; ওনান আরো একবার জানান দিল, বন্যপ্রাণীদের ওপরে বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি ভাইরাসের। প্রকৃতির নিয়ম মেনেই বজায় রয়েছে তাদের উড়ান।
Powered by Froala Editor