এ যেন প্রায় ৬২ বছরের বিবাহিত জীবন কাটানোর পর, একে অন্যকে শেষ বিদায় জানানোর আগে নতুন করে প্রেমে পড়ার গল্প। ইংল্যান্ডের বার্টন অঞ্চলের কুইন্স হাসপাতালে হাতে হাত রেখে শুয়ে আছেন ৯২ বছরের অসুস্থ জো উইলসন এবং তাঁর স্ত্রী ৮৮ বছরের মারজোরি— এই ছবি দেখা গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদিও করোনা মহামারী যত দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে, ততই একাধিক মনখারাপ করা ছবি সামনে এসেছে বিশ্ববাসীর। করোনা মহামারীর সংক্রমণের হার বাড়তে থাকার পর থেকেই বারংবার বলা হয়েছে প্রবীণ নাগরিকেরাই এই অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাসের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় আছে। তবে এই গল্পে ভিলেন করোনা ভাইরাস নয়।
করোনা আবহের মধ্যেই গত মে মাসে উইলিয়ামসন জানতে পারেন, গুরুতর ‘টার্মিনাল ক্যানসারে’ আক্রান্ত তিনি। সেই মুহূর্তেই তাঁকে কুইন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেই সময়েই তাঁর স্ত্রীও অসুস্থ হয়ে পড়ায় অপর একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয় তাঁকে।
দু’জনেরই শারীরিক অবস্থা দেখে হাসপাতালের কর্মীরা বুঝতে পেরেছিলেন যে, আর কখনোই হয়তো একে অন্যের সঙ্গে দেখা করা হয়ে উঠবে না এই দম্পতির। কুইন্স হাসপাতালের সেবিকা এমা বার্কারের মনে যদিও অন্য কিছু ছিল। ঘটনাটিকে হৃদয় দিয়ে বিবেচনা করে মারজোরির নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে উইলসন এবং মারজোরিকে একই জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করেন তিনি। উইলসনের বিছানার পাশেই পাতা হয় মারজোরির বিছানা। এক হওয়ার পর প্রায় ১০ মিনিট ধরে একে অন্যের হাত ধরে ছিলেন জন-মারজোরি, জানিয়েছেন হাসপাতালের কর্মীরা। হাসপাতালের কর্মীরা সেই সময় যে ছবিটা তুলেছিলেন তাঁদের, ঘটনাচক্রে সেটাই শেষ ছবি হয়ে থেকে যায় তাঁদের ৬২ বছরের বিবাহিত জীবনের। গত ১৫ই জুন মারা যান জন উইলসন।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতেও সামনে এসেছিল এরকমই একটি আবেগময় ভিডিও। তাতে দেখা গিয়েছিল যে, একজন করোনা আক্রান্ত বয়স্ক রোগী যত্ন নিচ্ছেন তাঁর স্ত্রীর, যিনিও ওই মারণ ভাইরাসেই আক্রান্ত ছিলেন। অজস্র মৃত্যু এবং মনখারাপের ভিড়ে এই ভালবাসার ছবিগুলোও তাই যেন রোজ নতুন করে ভালোবাসতে শিখিয়ে দিচ্ছে আমাদেরও। শেষ দিন পর্যন্ত পাশে পাশে থাকতে বলছে একে অন্যের।
আরও পড়ুন
৯৮ বছর বয়সে হারালেন করোনাকে, রাজ্যের প্রবীণতম করোনাজয়ী এই ব্যক্তি
Powered by Froala Editor