মার্চ মাসে লকডাউনের পরেই এক অদ্ভুত দৃশ্যের সাক্ষী ছিল সারা দেশ। রাস্তায় রাস্তায় সার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে মানুষ। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। যোগাযোগ ব্যবস্থা অপ্রতুল। তাই ভরসা নিজেদের পায়ের উপরেই। এরপর কেটে গিয়েছে ৬ মাস। আবারও যেন সেই একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে। তবে এবার তাঁরা হেঁটে যাচ্ছেন উল্টোদিকে। অর্থাৎ নিজেদের গ্রাম ছেড়ে আবারও শহরে কর্মক্ষেত্রের দিকে রওয়ানা হচ্ছে মানুষ। এখন পরিবহন ব্যবস্থা অনেকটা সহজ হওয়ায় সেই দৃশ্য আর স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এল এমন তথ্যই।
সরকারের পরিসংখ্যান এবং অর্থনীতি বিভাগের কিছু প্রাক্তন অফিসার সম্প্রতি দেশের ২৫টি রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখেন, অনেকেই আবার ফিরে যাচ্ছেন কর্মক্ষেত্রে। কাজ হারিয়ে প্রবল অর্থকষ্টের মধ্যে দিন গুজরান করছেন বাকিরা। অন্তত ৭০ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিক এখন কাজের ক্ষেত্রে ফিরে যেতে পারলেই বেঁচে যান। যদিও শহরে গেলেই যে কাজ পাবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু সম্ভাবনা তো থেকেই যায়।
আসলে করোনা পরিস্থিতিতে গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নত হয়েছে বলে প্রচার করা হলেও, বাস্তবের চেহারাটা আদৌ সেরকম নয় বলে জানাচ্ছেন সমীক্ষকরা। রোজগার হারিয়ে অসহায় শ্রমিকরা শুধু বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। শহরের অর্থনীতিও ভেঙে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কারখানা ও অন্যান্য প্রকল্পের কাজ আবার শুরু হলেও তার পরিমাণ বেশ কম। আগের চেয়ে অস্থায়ী ক্ষেত্রে এখন ৪১ শতাংশ শ্রমিক নিয়োগের পরিস্থিতি আছে বলেই জানাচ্ছে সমীক্ষা। অন্যদিকে ৭০ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিক এক্ষুনি রোজগারের রাস্তা খুঁজে না পেলে সংসার চালাতে পারবেন না। এই পরিস্থিতি থেকে কীভাবে উদ্ধার সম্ভব, সে-বিষয়ে যদিও দৃষ্টি আকর্ষণ করেননি সমীক্ষকরা। তবে আশা করা যায়, অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা সেই সমাধানের সূত্র হাজির করবেন নিশ্চই। এই বিপুল পরিমাণ মানুষকে কি নাহলে আবার এক কঠিন ভবিষ্যতের মুখে পড়তে হবে?
Powered by Froala Editor