অসম এনআরসি’র পূর্ণ তালিকা প্রকাশের পর পেরিয়ে গেছে এক বছরেরও বেশি সময়। তবে থমকে রয়েছে নথি যাচাইয়ের কাজ। ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছিলেন বহু বহু নাগরিক। যাঁরা স্পিকিং অর্ডার না পাওয়ায়, আবেদন করতে পারছিলেন না পুনর্যাচাইয়ের জন্য। কোভিড পরিস্থিতির জন্যই এই অবস্থা, তা জানিয়ে ছিলেন অসমের সরকারি আধিকারিকেরা। তবে প্রক্রিয়ার এই দেরি হওয়ার দায় এবার ফরেনার ট্রাইবুনালের আধিকারিকদের ওপরেই চাপিয়ে দিল অসম সরকার।
ধুবরি, করিমগঞ্জ, দক্ষিণ সালমারা এবং হাইকালিন্দি এই চার জেলায় ২০ শতাংশ তালিকাভুক্তদের নতুন করে নথিপত্র যাচাই করার কথা জানায় সরকার। পাশাপাশিই অন্যান্য রাজ্যগুলি থেকে ১০ শতাংশ নাগরিকদের ক্ষেত্রেও জারি করা হয় এই যাচাইয়ের প্রক্রিয়া। সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক এনআরসি মামলার শুনানিতে বলা হয়েছিল ২৭ শতাংশ ব্যক্তিদের পুনর্যাচাইয়ের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে ইতিমধ্যেই। বাকি যাচাইয়ের কাজ দ্রুত শুরু হবে বলেই আশ্বাস দিয়েছিল অসমের সরকারি আধিকারিকেরা।
এই যাচাই প্রক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন করেন ফরেনার্স ট্রাইবুনালের আধিকারিকরা। প্রক্রিয়াকরণে দেরি হওয়ার জন্য গত ৮ সেপ্টেম্বর ধুবরি জেলার ফরেনার্স ট্রাইবুনালের ৭ আধিকারকে বরখাস্ত করে প্রশাসন। তবে সেখানেও স্পষ্ট উঠে আসছে সাম্প্রদায়িকতার ছাপ। বরখাস্ত হওয়া সাত আধিকারিকই মুসলিম সম্প্রদায়ের। তাঁদের বদলে নিয়জিত হয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের আধিকারিক। তবে এখনও তাঁদের কাছে অস্পষ্ট এই বরখাস্তের কারণ। আগে থেকে কোনো রকম নোটিশও পাননি তাঁরা। চিঠিতেও তাঁদের নামে সেইভাবে কোনো অভিযোগ উল্লেখিত হয়নি।
উল্লেখ্য ২০১৬ সালে এই আধিকারিকদের নিয়োগ করেছিল অসম প্রশাসন। ২০১৭ সালে এই বিশেষ কাজের জন্য তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে আগস্টে তালিকাপ্রকাশের পরেও আবার তাঁদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল সরকার। এতকিছুর পরেও বিনা-নোটিসে কেন ছাঁটাই করা হল তাঁদের, উঠছে সেই প্রশ্নই। অসমের ভোটব্যাঙ্কের বেশির ভাগটাই আসে হিন্দু জনগোষ্ঠী থেকে, সেই কথা মাথায় রেখেই কি এই সিদ্ধান্ত সরকারের? নাকি লুকিয়ে রয়েছে অন্য কোনো অভিসন্ধি?
বরখাস্ত হওয়া আধিকারিকরা আইনি পরামর্শদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে সূত্রের খবর। আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনার পরে আদলতে আইনি পদক্ষেপও নিতে পারেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তবে সরকারের এই সাম্প্রদায়িক চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশের পর পুনর্যাচাইয়ের প্রক্রিয়া যে স্বচ্ছ হবে না, সে ব্যাপারে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে তাঁদের...
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
আরও পড়ুন
একবছর পেরিয়েও থমকে প্রক্রিয়া, নাগরিকত্ব ‘প্রমাণে’র সুযোগই পাননি অসমের ১৯ লক্ষ বাঙালি
Powered by Froala Editor